গুরুমস্তিষ্ক কাকে বলে ? গুরুমস্তিষ্কের কাজ ও গঠন

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

গুরুমস্তিষ্ক কাকে বলে ? গুরুমস্তিষ্কের কাজ ও গঠন

গুরুমস্তিষ্ক কাকে বলে – Cerebral Cortex : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে গুরুমস্তিষ্ক কাকে বলে এবং গুরুমস্তিষ্কের কাজ ও গঠন সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

গুরুমস্তিষ্ক কাকে বলে :

অগ্রমস্তিষ্কের যে অংশ করোটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে এবং প্রাণীর বুদ্ধি, চিন্তা, স্মৃতি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে গুরুমস্তিষ্ক বা সেরিব্রাল কর্টেক্স বা সেরিব্রাম বলে।

সেরিব্রাল কর্টেক্স বা গুরুমস্তিষ্ক মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মুখ্যত ধূসর পদার্থ অর্থাৎ নিউরোনের কোশদেহ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে প্রায় 10 বিলিয়ন নিউরোনের কোশদেহ থাকে এবং কোশদেহগুলির মধ্যে অসংখ্য স্নায়ুসংযোগ বিদ্যমান। গুরুমস্তিস্ক ছাড়া দেহের অন্য কোনো অঙ্গ মানুষকে অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীদের থেকে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করতে পারে না।

গুরু মস্তিষ্কের গঠন :

গুরুমস্তিস্কটি একটি অনুদৈর্ঘ্য মস্তিষ্ক খাঁজ দিয়ে দুটি গোলার্ধে বিভক্ত, এদের যথাক্রমে ডান সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার ও বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার বলে। গোলার্ধ দুটি করপাস ক্যালোসাম নামক স্নায়ুযোজক দিয়ে সংলগ্ন থাকে। গুরুমস্তিষ্কের বহির্দেশে অবস্থিত গভীর খাঁজগুলিকে সালকাস এবং ঢেউ খেলানো ভাঁজগুলিকে জাইরাস বলে। গুরুমস্তিষ্কের বহির্ভাগকে সেরিব্রাল কর্টেক্স এবং অন্তর্ভাগকে সেরিব্রাল মেডালা বলে। গুরুমস্তিষ্কের প্রতিটি গোলার্ধ চারটি খণ্ড বা লোব নিয়ে গঠিত। এই খণ্ডকগুলি হল-

i. ফ্রন্টাল লোব বা সম্মুখ খণ্ড : এটি গুরুমস্তিষ্কের সামনের দিকে অবস্থিত। এখানে মননকেন্দ্র ও বাক শুরু কেন্দ্র অবস্থিত।

ii. প্যারাইটাল লোব বা তালুখণ্ড : এটি গুরুমস্তিষ্কের তালুতে অর্থাৎ মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে ভাব-নিয়ামক অঞ্চল অবস্থিত।

iii. টেম্পোরাল লোব বা পার্শ্বখণ্ড : এটি গুরুমস্তিষ্কের দু-পাশে কানের ঠিক ওপরে অবস্থিত। এখানে শ্রবণকেন্দ্র থাকে।

iv. অক্সিপিটাল লোব বা পশ্চাৎ খণ্ড : এটি গুরুমস্তিষ্কের পশ্চাদভাগে অবস্থিত। এখানে দর্শনকেন্দ্র অবস্থিত। যে স্নায়ুখাজগুলি গুরুমস্তিষ্ককে বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ করেছে সেগুলি হল-

i. কেন্দ্রীয় স্নায়ুখাজ বা রোলাল্ডোর স্নায়ুখাজ : এটি ফ্রন্টাল ও প্যারাইটাল খণ্ডের মাঝে অবস্থিত।

ii. সিলভিয়াস স্নায়ুখাজ : এটি প্যারাইটাল ও টেম্পোরাল খণ্ডের মাঝখানে অবস্থিত।

iii. প্যারাইটো-অক্সিপিটাল স্নায়ুখাজ : এটি প্যারাইটাল ও অক্সিপিটাল খণ্ডের মাঝে অবস্থিত।

iv. ক্যালোসোমার্জিনাল স্নায়ুখাজ : এটি অক্সিপিটাল ও লিম্বিক খণ্ডের মাঝে অবস্থিত। সেরিব্রাল কর্টেক্স তিনটি বিভাগ নিয়ে গঠিত, যথা- আর্কিকর্টেক্স, প্যালিওকর্টেক্স এবং নিওকর্টেক্স।

কলাস্থান :

গুরুমস্তিস্কের কেন্দ্রে শ্বেত বস্তু এবং পরিধির দিকে ধূসর বস্তু থাকে। ধূসর বস্তু প্রধানত স্নায়ুতন্তু, নিউরোগ্লিয়া এবং পাঁচ রকমের স্নায়ুকোশ দিয়ে গঠিত। শ্বেত বস্তু প্রধানত মায়েলিন স্নায়ুতন্তু দিয়ে গঠিত।

গুরুমস্তিকের কাজ :

গুরুমস্তিকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলি হল-

i. সাধারণ চেষ্টীয় কাজ : দেহের বিভিন্ন অংশের ঐচ্ছিক কার্যকলাপ সেরিব্রাল কর্টেক্সের 4 নং, 6 নং এবং 8 নং অঞ্চল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

ii. বিশেষ চেষ্টীয় কাজ : a. পেশিটান নিয়ন্ত্রণ। b. স্বয়ংক্রিয় এবং পরস্পর সম্পর্কিত কাজের নিয়ন্ত্রণ। c. স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ। d. নিম্নতর চেষ্টীয় কেন্দ্রের ওপর প্রতিরোধমূলক নিয়ন্ত্রণ। উপরোক্ত কাজগুলি 6 নং অঞ্চল এবং অল্পবিস্তর 4 নং অঞ্চল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

e. কথাবার্তা বা বক্তৃতা : এই ধরনের কাজ কর্টেক্সের ব্রোকাস অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গুরুমস্তিষ্কের 44 এবং 45 নং অঞ্চল ব্রোকাস অঞ্চল নামে পরিচিত।

iii. সংজ্ঞাবহ কাজ : a. সাধারণ অনুভূতি : স্পর্শ, ব্যথা, উত্তাপ, ঠান্ডা ইত্যাদি অনুভূতি গ্রহণ করা। b. বিশেষ অনুভূতি : স্বাদ, গন্ধ, দৃষ্টি, শ্রবণ ইত্যাদি অনুভূতির নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র হল সেরিব্রাল কর্টেক্স।

iv. শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্থান : সেরিব্রাল কর্টেক্স বিভিন্ন অধঃকটিক্যাল কেন্দ্রের সঙ্গে নতুন সংযোগস্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া গঠন করে। যেমন- শর্তাধীন লালারস ক্ষরণকারী প্রতিবর্ত ক্রিয়াটি কর্টেক্সের স্বাদকেন্দ্র, শ্রবণকেন্দ্র এবং অধঃকটিক্যাল কেন্দ্র মিলিতভাবে গঠন করে থাকে।

v. বুদ্ধিমত্তা-সংক্রান্ত কাজ : সকল বুদ্ধিদীপ্ত কাজের জন্য দায়ী হল গুরুমস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স, যেমন-স্মৃতি, বুদ্ধিমত্তা, পরিকল্পনা, বিচার ইত্যাদি কাজ এর দ্বারা সম্পন্ন হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন : 

মস্তিষ্কের কাকে বলে এবং বিভিন্ন অংশ ও কাজ ? 

2 thoughts on “গুরুমস্তিষ্ক কাকে বলে ? গুরুমস্তিষ্কের কাজ ও গঠন”

Leave a Comment