বইমেলা রচনা PDF | Book Fair

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বইমেলা রচনা PDF | Book Fair

বইমেলা

“জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে            পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে।”

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বই মানুষের নিত্যসঙ্গী সর্বোত্তম সহচর। মানুষ প্রতারণা করে কিন্তু বই প্রতারণার পরিবর্তে জ্ঞানচক্ষু প্রসারিত করে। মানুষ ধ্বংস হয় দেহ ধুলোয় মিশে যায় কিন্তু বই থেকে যায়। বই প্রসাদের চেয়ে বড়ো মন্দির মসজিদের চেয়েও বড়ো। বইয়ে থাকে যুগ যুগান্তরের চিন্তাভাবনা ও বিচিত্র জীবনের কথা। গ্রন্থপাট মানুষের এক দুর্নিবার নেশা এই নেশাতেই মানুষ ছোটে পাঠাগারে, ছোটে বইয়ের মিলনমেলায়।

বইমেলা (Book Fair) আসলে এক মিলনমেলা। এক সময় আমাদের গ্রামীণ মেলাগুলি এই মৈত্রী মিলনমেলার কাজ করত বা এখনো করে। নানা গ্রাম গ্রামান্তর থেকে অসংখ্য মানুষ এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। দর জানাজানির মাঝে ভালো-মন্দ সুখ-দুঃখ শান্তি সংগ্রামের খবর ও আদান-প্রদান হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলির অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষরতার অভিশাপে আচ্ছন্ন বই পড়ার ইচ্ছে থাকলেও নিজের মনের মতো বই থাকার সুযোগ পায় না। সাধারণত যেসব বইয়ের দোকান থাকে তারা স্কুল, কলেজর পাঠ‍্য বই রাখে বাণিজ্যিক কারণে। তাছাড়া বইমেলায় খোলামেলাভাবে দোকানে ঢুকে বই দেখার সুযোগ থাকে। প্রকাশকদের পুস্তক তালিকা সংগ্রহ করে বিপুল বইয়ের মাঝে নিজের পছন্দের বই বেছে নেওয়ার সুযোগ পায় বলে তা হয়ে ওঠে মিলনমেলা।

পৃথিবীর কত দেশ কত ভাষা। আর বিভিন্ন ভাষার লেখকদের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ নানা বৈচিত্র্যে ভরা গ্রন্থ সৃষ্টি হয়েছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু সে খবর কজনই বা জানতে পারে ? বাণিজ্যিক সফল পত্র-পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষমতা সব প্রকাশকের থাকে না। বই ছাপানোর খরচ বিজ্ঞাপনের খরচ এসব দিতে গিয়েই বইয়ের মূল্য যা নির্ধারিত হবে সেটা পাঠকের পক্ষে কেনা অসম্ভব হয়ে পরে। তাই বিজ্ঞাপনের পরিবর্তে বইমেলার উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন প্রকাশকের নতুন ও পুরাতন অচেতনা অজানা বইয়ের সম্ভার পাঠকের সামনে হাজির করা।

বইমেলা সর্বসাধারণের কাছে, সর্বরুচির পাঠকের কাছে মনোমত বিচিত্র ধরনের গ্রন্থরাজি নিয়ে আসে। গল্প ষকাহিনী, কবিতা, ধর্মগ্রন্থ, চিকিৎসাশাস্ত্র, রহস্য- রোমাঞ্চমূলক ডিটেকটিভ ভৌতিক গ্রন্থ এবং কিশোর পাঠ্য গ্রন্থরাজির সমাবেশে ঘটায়। তার থেকেও বড় কথা দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহের একটি অন্যতম জায়গা হল বইমেলা যেহেতু বইমেলায় থাকে দেশ-বিদেশের নানান বই।

শ্রী পান্থর লেখা থেকে পাই- চার খন্ড রামায়ণ কপি করে একজন লেখক অষ্টাদশ শতকে পেয়েছিলেন নগদ সাত টাকা এবং কিছু কাপড় আর মিঠাই। আজ কিন্তু তা স্বপ্ন, শ্রমিকের মজুরি, কাগজ, ছাপার দাম দিনে দিনে এত বেড়ে চলেছে যে মানুষ তাল রাখতে পারছে না। তাই প্রকাশক বইয়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন আর পাঠক বইয়ের দাম শুনেই কেনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। মুজতবা আলি এই মূল সত্য এবং সমস্যা প্রসঙ্গে বলেছেন “একটা অচ্ছেদ‍্য চক্র। বইয়ের দাম কম নয় বলে লোকে বই কেনে না আর বই কেনে না বলে বই সস্তা হয় না।” এর চেয়ে দামি কথা আর হয় না।

এই দুশ্ছেদ‍্য চক্র ছেদন করা দরকার। কিছু প্রকাশক ঝুঁকি নেয় বলেই বইমেলায় বা দোকানে বইয়ের দাম কমিয়ে পাঠককে বই কেনার সুযোগ করে দেন। বহু ভালোমানের বই অনামি প্রকাশকদের কাছে কম দামে পাঠক পেয়ে যান। পাশাপাশি বড়ো প্রকাশক যারা বিজ্ঞাপন দিতে পারেন যারা বড়লোকদের আলমারি সাজানোর জন্য বই বিক্রি করতে পারেন তারা পাঠকদের সঙ্গে বঞ্চনা করেন।

1976 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ময়দানে বইমেলার শুভাগমন। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ‘ক্যালকাটা বুক ফেয়ার’ চলে আসছে ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলারস গিল্ড-এর তত্ত্বাবধানে। কলকাতার প্রকাশন বিভাগ ছাড়াই ওই মেলায় হাজির হয় ভারতের নানান রাজ্যের অ্যাকাডেমি। বিপুল বইয়ের সম্ভার নিয়ে হাজির হয় বাংলাদেশ, ব্রাজিল, স্পেন, আমেরিকা, গ্রিস, নেদারল্যান্ড, স্পেন, প্রভৃতি দেশ। প্রকাশনায় থাকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিজ্ঞান, সাহিত্য, নানান দুষ্পাপ্য বই। কলেজ স্ট্রিট মোরে এইসব বই মেলে না। যদিও কোন কোন প্রকাশনায় তা থাকলেও বই পাগল মানুষ তা সন্ধান করে উঠতে পারে না। পাঠক নতুনত্বের সন্ধানি। নিত্যনতুন রূপের সন্ধানেই ছুটে যান বইমেলায়।

বর্তমানে বই পড়াকে সময় অপচয় মনে করে মানুষ আশ্রয় নেয় দূরদর্শন কিংবা ইন্টারনেটের। অনেকের ধারণা বইমেলা মিলন মেলা বেড়ানোর জায়গা ছাড়া কিছুই নয়- কিন্তু এ ধারণা সত্যি নয়। বইমেলা দেশ ও জাতির অগ্রগতির ও সংস্কৃতির পরিচয় প্রদান করে। গ্রন্থ সম্পর্কীয় যথার্থ তথ্য কেন্দ্র হল বইমেলা। প্রকৃত পড়ার বইয়ের হদিশ দেয় বইমেলা। লেখক-প্রকাশক-পাঠক ত্রিবেণী সংগমেই বইমেলার সার্থকতা।

আরও পড়ুন : 

বাংলার উৎসব রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা

PDF DOWNLOAD ZONE 

File Name : Book Fair
Language : Bengali
Size: 87 KB
Clik Here To Download

Leave a Comment