বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা । Science and Superstition

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বহু আবিস্কার বৈজ্ঞানিক যুগের বিজ্ঞান চোখের পলকে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। এখানে কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বিজ্ঞান ও কুসংস্কার আলাদা খুঁটি।আজকের আলোচনা বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা-টি নিয়ে

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার                        আথবা, কুসংস্কারের পরিণতি                    অথবা, মানব জীবনে কুসংস্কার                অথবা, আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা:

“যে জাতি জীবন হারা অচল অসাড়।           পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।”                              -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা :

মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তি দিয়েই প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করেছে, নানান প্রতিকূলতাকে জয় করে লক্ষ্যে পৌঁছেছে। বিচারবোধ, বুদ্ধি, সংগ্রাম করার মানসিকতায় জীবজগতের কাছে সাফল্য এনে দিয়েছে। আজ মানুষ সভ্যতার গর্বে গর্বিত, তবে এসবের পিছনে রয়েছে বিজ্ঞান।

কুসংস্কার কি :

কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তি বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস, মিথ্যা ধারণা। ইংরেজিতে একে বলা হয় Superstition যা কার্যত বহুদিন ধরে চলে আসছে। এমন অন্ধবিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারণে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের যুগেও মানুষ তন্ত্র-মন্ত্র, ঝাড়ফুঁক করে ভূত-প্রেত, ডাইনি, জিন ইত্যাদির ভয়ে মরে।

কুসংস্কারের উৎপত্তি :

আদিম মানুষ পাহাড়ে জঙ্গলে বসবাস করত তখন বিজ্ঞানের জন্ম হয়নি। মানুষ সেই সময় অতিপ্রাকৃত সত্তাই বিশ্বাসী ছিল। যেকোনো প্রাকৃতিক ক্রিয়াকান্ডের কারণ ও উসৎ সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকাই এসবের মূলে অপদেবতারা ক্রিয়াশীল। সেকালের মানুষের মনের দৃঢ়বদ্ধ হয়ে গিয়েছিল ভূত, প্রেত, ডাইনি  অশরীরী আত্মার কারসাজি রয়েছে বলে নিরক্ষর বিজ্ঞানচেতনাহীন মানুষ বিশ্বাস করত। এভাবেই কুসংস্কারের উৎপত্তি ও প্রসার ঘটে।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :

মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখলো সেদিনই পরোক্ষে তাদের অজান্তে বিজ্ঞানের জন্ম হল। মানুষ নানারকম ধাতুর ব্যবহার শিখলো। মানুষ প্রয়োজনে তাগিতে বিভিন্ন রকম জিনিস তৈরি করতে লাগলো, শুরু হলো গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিজ্ঞানের দৌলতে আবিষ্কার হলো নানারকমের ঔষধ। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান একে একে স্থান করে নিল।

“কত অজানারে জানাইলে তুমি                   কত ঘরে দিলে ঠাঁই                                     দূরকে করিলে নিকট বন্ধু                           পরকে করিলে ভাই।”                                                     -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কুসংস্কারের স্বরূপ :

কুসংস্কার ধর্মকে আশ্রয় করে বিকশিত হয়েছে,যেমন গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন, বলিদান প্রথা, দেবতাদের স্বপ্নাদেশ, মানুষের মধ্যে দেব-দেবীর ভর করা, বিশিষ্ট গাছকে বৃক্ষ দেবতা জ্ঞানে পুজা করা, ভন্ড সাধু সন্ন্যাসীর প্রতি বিশ্বাস, গ্রহরত্ন ধারণ, জ্যোতির্বিদ্যায় আস্থা এছাড়াও নানান কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস মানুষের চেতনা স্তরকে প্রভাবিত করেছে। আবার ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত কুসংস্কারও রয়েছে যেমন জোড়া শালিক দেখা, যাত্রাকালে পিঁছু ডাকা, বিড়ালের রাস্তা দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে যাওয়া কিংবা এক চক্ষু দর্শনে অমঙ্গল ইত্যাদি কুসংস্কারও মানব জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন কুসংস্কারের উৎস সম্পর্কে বলেন-” it is this undefined source of fear and hope which is the genesis irrational Superstition.”

ফলাফল :

কুসংস্কারের ফলে ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক জীবনে অনেক ক্ষতি স্বীকার করতে হয় ফলে ভন্ড সাধুসন্ন্যাসী, জ্যোতিষী, ওঝা, তান্ত্রিকের দ্বারা মানুষ নিত্য প্রবঞ্চিত হচ্ছে। রোগ নিরাময়ের জন্য তুকতাক, জলপরা, পূজা আচ্ছা, ওঝা বৈদ‍্য ইত্যাদিতে নির্ভর করে রোগীর মৃত্যুও ঘটে যায়।

কুসংস্কার দূরীকরণের উপায় :

কুসংস্কারের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার প্রসার ও বিজ্ঞান চেতনার বিস্তার। একমাত্র বিজ্ঞানীই হলো কুসংস্কারের বিনাশকারী। যেখানে নিরক্ষরতা সেখানেই ধর্মান্ধতা, আত্মবিশ্বাস সেখানেই মূল কুসংস্কারের রাজত্ব। নিরক্ষরতা দূরীকরণের পাশাপাশি বিজ্ঞান চেতনা বাড়াতে হবে। যুক্তি দিয়ে কুসংস্কারের অসাড়তা মানুষকে বোঝাতে হবে।

“বিপদ থাকে তো থাক তাই বলিয়া বিকাশের পথকে একেবারে পরিত্যাগ করিয়া চলিলে মঙ্গল নাই।”                                               -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কুসংস্কার দূরীকরণে ছাত্র-ছাত্রীর ভূমিকা :

ছাত্ররা জাতির মেরুদন্ড। ছাত্রজীবন সমাজের উপযুক্ত সময়। তাদের মধ্যে নিহিত থাকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। জাতির উন্নতিকে পিছনের দিকে ফেলে দেয় কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস। ছাত্ররাই পারে তাদের শিক্ষার আলো দিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে চেতনার আলো ফিরিয়ে আনতে এবং যে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা মানুষের মনের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বাসা বেঁধে আছে সেগুলিকে দূর করে মানুষকে যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানমুখী করে তুলতে। কারণ ছাত্ররা জানে-                                         “মোদের চোখে বিশ্ববাসীর                            স্বপ্ন দেখা হোক সফল                                আমরা ছাত্রদল।”

সরকারি পদক্ষেপ :

বিজ্ঞান চেতনার প্রসার এবং কুসংস্কার দূরীকরণের জন্য আমাদের দেশে নানা ভাবে প্রচেষ্টা চলছে। এই ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বিভিন্ন রকম সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ক্লাবগুলিকে এ বিষয়ে আগ্রহী করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান প্রদর্শনী, বিজ্ঞান মেলা, আলোচনা চক্র ইত্যাদির আয়োজন করতে হবে

উপসংহার :

বিজ্ঞানের সর্বাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বলতে হয় বিজ্ঞান আজও পুরোপুরিভাবে জয়ী হতে পারেনি। বিজ্ঞানের এই পরাজয়ের পিছনের প্রকৃত কারণ হল জনসচেতনার অভাব। তাই এই সমাজকে সম্পূর্ণরূপে কুসংস্কার মুক্ত করে বিজ্ঞানের আলোতে আলোকিত করতে হলে সমাজের বুকে সচেতনতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।

আরও পড়ুন : বাংলার উৎসব রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনাটি পড়ে কেমন লাগলো অবশ্যই একটি মন্তব্য করে আপনার ব‍্যক্তিগত মতামত জানাবেন।

6 thoughts on “বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা । Science and Superstition”

Leave a Comment