বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে এই পর্বটিতে বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করা হল। এই প্রবন্ধ রচনাটি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন দেখে নেওয়া যাক আজকের মূল আলোচনা বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনাটি।

বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে তেমনি পরিবেশের উপর ক্ষতির সাধন বেড়ে গেছে। আজকে আমরা বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ রচনা-টি সম্পর্কে জানব। চলুন এখানে যাক তাহলে বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনাটি।

বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ :

ভূমিকা :

আগুনের গোলক থেকে পৃথিবী গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই জন্ম হয়েছিল প্রকৃতি ও পরিবেশের । ঠিক একইসময় হয়তো বিজ্ঞানেরও সূচনা হয়েছিল। তবে পাথরে পাথরে ঘর্ষণের মাধ্যমে উৎপন্ন আগুনের বিচ্ছুরণের মধ্য দিয়েই আদি মানবের কাছে বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ আর তখন থেকেই মানুষের হাত ধরে শুরু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথচলা । এ পৃথিবীর বক্ষজুড়ে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য বিছিয়ে রেখেছে । ঠিক তেমনভাবেই প্রকৃতির নাড়ির মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে নানান বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা । এমনই বিভিন্ন জ্ঞান এবং সম্ভাবনার সঙ্গে মানুষের প্রথম সাক্ষাৎকারের পর পেরিয়ে গেছে অনেক বছর ।

ধীরে ধীরে মানুষ , প্রকৃতির মধ্যে প্রচ্ছন্ন বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সূত্রের যেমন খোঁজ পেয়েছে , তেমনই প্রযুক্তির জগতেও সে অসাধ্যসাধন করেছে। গ্যালিলিয়ো – নিউটনের যুগ পেরিয়ে আইনস্টাইন , জগদীশচন্দ্র বসু কিংবা সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখের মতন অসামান্য প্রতিভাধর বৈজ্ঞানিকদের উদ্ভাবনী কৌশল এবং মৌলিকতার জোরে মানুষ ঘোষণা করেছে মেধা ও মননের জয়ধ্বনি। শতসহস্র রকমের যন্ত্র ও পণ্য আবিষ্কারের ফলে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আজ স্পর্শ করেছে উন্নতির শিখর । দৈনন্দিন জীবনে , শিক্ষায় , চিকিৎসায় নব নব উদ্ভাবন পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয় । মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে টিভি , কম্পিউটার , ফোন ।

এখনকার দিনে প্রযুক্তির কল্যাণেই সাতসমুদ্র – তেরো নদীর গণ্ডি উপেক্ষা করে মানুষ এক নিমেষে পৌঁছে যেতে পারে অপর প্রান্তের মানুষের কাছে , এমনকি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরেও মানুষ বিস্তার করেছে নিজের প্রভুত্ব । এভাবেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা যেমন নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে , তেমনভাবে অন্যদিকে গোগ্রাসে গিলতে শুরু করেছে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে । ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী মানুষের ঘৃণ্য বেহিসেবি আস্ফালনে অরণ্য – জনপদ – সভ্যতা যেমন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক রূপকে প্রত্যক্ষ করেছে , দেখেছে মনুষ্যত্বের অপমৃত্যু তেমনই প্রতিমুহূর্তে এর অপব্যবহারের ফলে তিলে তিলে দুষিত ও বিষাক্ত হচ্ছে পৃথিবী।

বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ ও বিপন্ন পরিবেশ :

আমরা সবাই জানি বাতাস এবং অক্সিজেন ছাড়া আমাদের জীবন অচল । মানুষ খাবার ছাড়া কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে । জল না – খেয়েও কিছুদিন প্রাণধারণ সম্ভব । কিন্তু বাতাস তথা অক্সিজেন ছাড়া কয়েক মিনিটও বেঁচে থাকা সম্ভব নয় । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির নাম করে আজ আমরা এই পৃথিবীকে যেখানে এনে দাঁড় করিয়েছি , সেখানে প্রতিনিয়ত সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে , বাতাস দূষিত করে আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রাণসংশয়ের কারণ হয়ে উঠছি না তো ? আমাদের পৃথিবীর অপূর্ব জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছি না তো ! এই প্রশ্ন কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের পৃথিবীর সামনে সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে ।

যে পরিমাণে দূষণ বেড়ে চলেছে তাতে এই পৃথিবীর আয়ু আর কত বছর ? এর উত্তর আমাদের জানা নেই । শিল্পবিপ্লব যেমন আশীর্বাদ , তেমনি আধুনিক দূষণের যাত্রাও সেখান থেকেই । কলকারখানায় ও মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে কয়লা , তেল , গ্যাসের ব্যবহার রাতারাতি বেড়ে চলল । বাড়তে থাকল কারখানার ধোয়া । কারখানার | বর্জ্য এসে নদীতে পড়ে জলকে দূষিত করতে শুরু করল । লক্ষ লক্ষ যানবাহন , চলতে শুরু করল আর বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড , – মিথেন , নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসের উপস্থিতি বেড়েই চলল । গর্ত তৈরি হল স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন গ্যাসের আচ্ছাদনে । সেখান দিয়ে ঢুকতে শুরু করল সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করল।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন , সমুদ্রের জলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার অনেক দ্বীপ ডুবে যাচ্ছে । সুন্দরবনের ঘোড়ামারা দ্বীপের কিছু অংশ এই কারণেই জলের নীচে চলে গিয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। পরিবেশদূষণের ফলে আমাদের ঋতুবৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে গেছে। কবি জীবনানন্দের ‘ রূপসী বাংলা ‘ – য় আমরা যে হেমন্তের বর্ণনা শুনি , সেই হেমন্তকালকে আজ আর আমরা এই দূষণের বাংলায় চিনতে পারি না । হেমন্ত হারিয়ে গিয়েছে দূষণের অন্ধগলিতে । ‘ এল নিনো ’ – র প্রতিক্রিয়ায় এখন ভারতে বর্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে বৃষ্টির পরিমাণ । যা এসে সরাসরি আঘাত করছে ফসলের উৎপাদনে ।

বজ্রপাত বেড়ে গেছে । বেড়েছে টাইফুন , সাইক্লোনের সংখ্যা। খবর আসছে অ্যাসিড বৃষ্টিরও । এর সঙ্গেই চলছে বৃক্ষ নিধন।বন কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। হাতি , বাঘ খাবারের অভাবে লোকালয়ে চলে আসছে । নানা সংরক্ষণ আইন সত্ত্বেও বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে । কত পাখি নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে শহরের বুক থেকে। মাতৃক্রোড়ে জন্ম হচ্ছে অপরিণত শিশুর । কোন্ পথে চলেছি আমরা , এই প্রশ্ন উঠছে । জল , জঙ্গল , আকাশ , বাতাস , মাটি আমরা প্রতিদিনই দূষিত করে চলেছি নিজ হাতে ।

প্রকৃতি যখন এর চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিতে শুরু করবে তখন আমরা কী জবাব দেব , সেই উত্তর আমাদের জানা নেই । ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এ কোন্ পৃথিবী রেখে যাচ্ছি , জানা নেই সেই উত্তরও । এইভাবেই যদি চলতে দেওয়া হয় , বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নানা ধরনের দূষণজনিত মড়ক দেখা দেবে । ইতিমধ্যেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে , ওজোন আচ্ছাদনে গহ্বর সৃষ্টি হওয়ায় পৃথিবীতে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে । দুষিত জল খেয়ে ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে মৃতের হার বেড়েই চলেছে।

পরিত্রাণের পথ :

এভাবেই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে | প্রকৃতির প্রচুর ক্ষতি হয়েছে । গাছ কেটে তৈরি হয়েছে নানা ফ্যাক্টরি , মোবাইল ফোনের সিগন্যাল টাওয়ারের জন্যে ক্ষতি হয়েছে বহু পশুপাখির । শুধু তাই নয় , এখনকার সবচেয়ে বড়ো চিন্তার বিষয় হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন । বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং । এর ফলে পৃথিবার তুষার চূড়ার বরফ গলে যাচ্ছে । এবং ফলস্বরূপ পৃথিবীর বুকে জলের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে । পরিবেশের বুকে ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীন উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিসর্বস্বতায় মানুষ যতই উপকৃত হোক – না – কেন , প্রকৃতি ও পরিবেশের কোনো ভয়াবহ বিপর্যয়ে মানুষের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । তাই এই যুগের বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে নতুনভাবে গ্রহণ করার চেষ্টা করছেন ।

বিজ্ঞানের যে – রূপে প্রকৃতি তার সামঞ্জস্য ফিরে পাবে আর মানুষও নিজেদের অগ্রগতির সুবিধা উপভোগ করতে পারবে , সেই প্রযুক্তিরই নাম ‘ ইকো – ফ্রেন্ডলি টেকনোলজি ’ , অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি স্থাপন করে মানবসভ্যতার উন্নতি । এর ফলে তৈরি হচ্ছে নানা ‘ বায়ো – ডিগ্রেডেবল ‘ জিনিস , যেগুলো প্রকৃতির কাছেই আবার ফিরে যেতে পারে । বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে সূর্যের রশ্মি এবং খোঁজ চলছে পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না , এমন বিভিন্ন বিকল্প শক্তির । বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা নিজের মতো করে পরিবেশবান্ধব হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে । এটাই আশার কথা ।

মূল‍্যায়ন :

মনে রাখতে হবে পরিবেশ ধ্বংসের আঘাত প্রথমে পড়বে ভারতের মতো জনবহুল গরিব দেশে । ফলে বিশ্বের বিভিন্ন মঞে এইসব উন্নয়নশীল দেশেরই বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত । এটা ঠিক , কয়েক দশক আগেও বিপদটা যত ভয়াবহ ছিল , আজ তার থেকে কিছুটা হলেও পরিস্থিতি ভালো হয়েছে । দেশে দেশে পরিবেশ বাঁচানোর কঠোর আইনকানুন প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে । তবে সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত আমরা , এমন দাবি করার জায়গা থেকে আমরা এখনও যোজন যোজন দূরে আছি । এই আক্ষেপ ও হতাশা থেকেই কবি জীবনানন্দ লিখেছিলেন , ‘ আমাদের এই শতকের / বিজ্ঞান তো সংকলিত জিনিসের ভিড় শুধু – বেড়ে যায় শুধু ; / তবু কোথাও তার প্রাণ নেই বলে অর্থময় / জ্ঞান নেই আজ পৃথিবীতে ; জ্ঞানের বিহনে প্রেম নেই ।’

আরও পড়ুন :

বাংলার উৎসব 

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার 

1 thought on “বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা”

Leave a Comment