জলচক্র কাকে বলে : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে আলোচনা করলাম জলচক্র কাকে বলে এবং মানবজীবনে কার্স্ট ভূমিরূপের প্রভাব সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।
জলচক্র কাকে বলে :
জল বায়ুমণ্ডল থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠে তারপর পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে আবর্তিত হয়। জলের এই বিরামহীন চক্রাকার আবর্তনকেই জলচক্র বলে। অপরভাবে, জলচক্রের সংজ্ঞায় বলা যেতে পারে, জলের ভৌত পরিবর্তন ও বিনিময়ের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল, শিলামণ্ডল ও বারিমণ্ডলের মধ্যে জলের যে সমতা রক্ষিত হয় তাকেই জলচক্র বলে।
জলচক্রের পর্যায় : বাষ্পীভবন, ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণের মাধ্যমে জলচক্র সম্পাদিত হয়। এই তিনটি প্রক্রিয়ার যে-কোনো একটি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে জলচক্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সূর্যের কিরণে জল বাষ্পে পরিণত হয়। বায়ুমণ্ডলের ওই বাষ্প অনুকূল পরিবেশে ঘনীভূত হয়ে জলভাগ ও স্থলভাগে বৃষ্টিপাত বা তুষাররূপে পতিত হয়। অধঃক্ষেপণের এক অংশ মৃত্তিকা শোষণ করে ভৌমজলের ভাণ্ডার গড়ে তোলে, এক অংশ পুকুর, হ্রদ, নদীতে সঞ্চিত হয় এবং বাদ বাকি অংশ পৃষ্ঠপ্রবাহরূপে সমুদ্রে পুনরায় ফিরে যায়। এবং পুনরায় ওই জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। প্রকৃতিতে জল এইভাবে আবর্তিত হয়।
মানবজীবনে কার্স্ট ভূমিরূপের প্রভাব :
কাস্ট ভূমিরূপ মানবজীবনের ওপর নানা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে যেমন-
১. খনিজ সম্পদের জোগান : কার্স্ট অঞ্চল চুনাপাথর, ডলোমাইট, ক্যালসাইট প্রভৃতি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। লোহা-ইস্পাত ও বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্পে এসব খনিজ দ্রব্যের চাহিদাকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে।
২. আশ্রয়স্থল : চুনাপাথর অঞ্চলের গুহাগুলি মানুষের আশ্রয়স্থল, পবিত্র স্থান ও উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৩. জলবিদ্যুৎ উৎপাদন : গুহার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদী এবং প্রস্রবণের জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় ।
৪. পর্যটন শিল্প : চুনাপাথর অঞ্চলের গুহাকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে।
৫. পশুপালন: কার্স্ট অঞ্চলের মাটি অগভীর ও পাথুরে হওয়ার জন্য মৃত্তিকার ক্ষয় বেশি হয়। এই অঞ্চলের মাটি আলগা হওয়ায় জল খুব সহজেই গভীরে নেমে যায়। জলের সঙ্গে মাটির পুষ্টিমৌলও ধৌত প্রক্রিয়ায় মাটির নীচে চলে যায় ফলে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে। এই কারণে স্বাভাবিক উদ্ভিদ তেমন জন্মাতে পারে না। তৃণই হল এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ। ফলে তৃণের ওপর নির্ভর করে এই অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।
৬. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বন্ধুর, ভূপ্রকৃতি, দ্রবণজনিত ধস নানান প্রতিকূল পরিবেশের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয়। তাই এই অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব হয়নি ।
৭. শিল্পকার্য : প্রস্রবণের জলকে নির্ভর করে পিক ক্যাভার্ন (ডার্বিশায়ার), কেন্টাকিতে পাতন কারখানা (Distillery) গড়ে উঠেছে।
1 thought on “জলচক্র কাকে বলে ? মানবজীবনে কার্স্ট ভূমিরূপের প্রভাব”