মিয়োসিস কাকে বলে ? মিয়োসিসের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ | What is Meiosis

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

মিয়োসিস কাকে বলে ? মিয়োসিসের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ | What is Meiosis

মিয়োসিস কাকে বলে : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা মিয়োসিস কাকে বলে এবং মিয়োসিস এর বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

মিয়োসিস :

মিয়োসিস শব্দটি গ্রিক শব্দ মিওউম (Meioum = To make small, or to lessen) থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যেহেতু এই প্রকার কোশ বিভাজনে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। বিজ্ঞানী ভন্ বেনেডিন, স্ট্রাসবার্গার, সাটন, উইনিওয়াটার জনন কোশ তৈরির পূর্বে কোষ বিভাজন বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং বলেন জনন কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। বিজ্ঞানী গ্রেগোয়র মিয়োসিস-1 এবং মিয়োসিস-II প্রথম পৃথক করেন। বিজ্ঞানী থমাস হান্ট মরগ্যান ড্রসোফিলায় প্রথম ক্রসিং ওভার ও জিনের পুনর্বিন্যাস প্রমাণ করেন। বিজ্ঞানী ফার্মার এবং মুরে  মিয়োসিস শব্দটি প্রবর্তন করেন।

মিয়োসিস কাকে বলে :

যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় ডিপ্লয়েড জনন মাতৃকোশ পর পর দুবার বিভাজিত হয়ে অর্ধসংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট চারটি হ্যাপ্লয়েড অপত্য জননকোষ গঠন করে, তাকে মিয়োসিস বলে।

মিয়োসিসের বৈশিষ্ট্য :

মিয়োসিসের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি হল-

i. যৌন জননকারী সকল জীবদেহে মিয়োসিস কোষ বিভাজন অপরিহার্য। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ডিপ্লয়েড জনন মাতৃকোশ থেকে চারটি হ্যাপ্লয়েড জননকোশ উৎপন্ন হয়।

ii. উন্নত উদ্ভিদ দেহে ডিপ্লয়েড রেণুমাতৃকোশ এই প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড রেণু উৎপন্ন করে।

iii. মিয়োসিস বিভাজনে মাতৃকোশটি দু-বার বিভাজিত হয়- প্রথম মিয়োসিস বিভাজন এবং দ্বিতীয় মিয়োসিস বিভাজন। মিয়োসিস-I হল হ্রাস বিভাজন এবং মিয়োসিস-II হল সম বিভাজন ৷

iv. মিয়োসিস বিভাজনে ক্রোমোজোমের বিভাজন একবার ঘটে কিন্তু নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের বিভাজন দু-বার ঘটে। সৃষ্ট অপত্য কোশগুলিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও বংশগতি বস্তু মাতৃকোশের অর্ধেক হয়।

v. মিয়োসিস বিভাজনে ক্রসিংওভার ঘটায় জনন কোশের ক্রোমোজোমে জিনের পুনর্বিন্যাস ঘটে এবং উভয় প্রকার গ্যামেট (পুং ও স্ত্রী গ্যামেট) মিলনের ফলে সৃষ্ট অপত্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়।

vi. আর্কিয়া বা ব্যাকটেরিয়া কোশে মিয়োসিস বিভাজন ঘটে না, এরা অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করে।

মিয়োসিসের প্রকারভেদ :

জীবন চক্রের কোন্ পর্যায়ে মিয়োসিস সম্পন্ন হয় এবং কী ধরনের কোশ উৎপন্ন করে তার ভিত্তিতে মিয়োসিস তিন ধরনের হয়-

i. গ্যামেটিক মিয়োসিস বা প্রান্তীয় মিয়োসিস : ডিপ্লয়েড জনন মাতৃকোশ থেকে যে মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় হ্যাপ্লয়েড রেণু গঠিত হয় যা পরবর্তীকালে গ্যামেট উৎপন্ন করে তাকে গ্যামেটিক মিয়োসিস বলে। উন্নত প্রাণীতে এই প্রক্রিয়াতে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। ডিপ্লয়েড দশার শেষে জননকোশ বা গ্যামেট উৎপাদনের ঠিক আগে এই মিয়োসিস হয় বলে একে প্রান্তীয় মিয়োসিস বলে।

ii. জাইগোটিক মিয়োসিস বা প্রারম্ভিক মিয়োসিস : শৈবাল, ছত্রাক প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ প্রধানত হ্যাপ্লয়েড প্রকৃতির। এদের নিষেকের ফলে যে ডিপ্লয়েড জাইগোট সৃষ্টি হয়। তা মিয়োসিসের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড রেণু গঠিত হয় যা পুনরায় হ্যাপ্লয়েড থ্যালাস সৃষ্টি করে। এই মিয়োসিসের মাধ্যমে জীবনচক্রের প্রধান বা মুখ্য হ্যাপ্লয়েড দশার সূচনা হয় বলে একে প্রারম্ভিক মিয়োসিস বলে।

iii. স্পোরিক মিয়োসিস বা মধ্যবর্তী মিয়োসিস : ফার্ন এবং সপুষ্পক উদ্ভিদে এই ধরনের মিয়োসিস দেখা যায়। ফার্নের ক্ষেত্রে রেণু মাতৃকোশ থেকে এই প্রক্রিয়ায় হ্যাপ্লয়েড রেণু সৃষ্টি হয়। সপুষ্পক উদ্ভিদে ডিম্বাণু মাতৃকোশ বা পরাগরেণু মাতৃকোশে স্পোরিক মিয়োসিস ঘটায় হ্যাপ্লয়েড ডিম্বাণু বা পরাগরেণু উৎপন্ন হয়। নিষেক ও জননকোশ গঠনের মধ্যবর্তী কোনো স্থানে এই মিয়োসিস সম্পন্ন হয় বলে এই মিয়োসিসের অপর নাম মধ্যবর্তী মিয়োসিস। যে মিয়োসিসে রেণু মাতৃকোশ থেকে রেণু বা স্পোর সৃষ্টি হয় তাকে স্পোরিক মিয়োসিস বলে।

আরও পড়ুন :

মাইটোসিস কাকে বলে এবং মাইটোসিসের দেহকোষ ও পদ্ধতি ?  

অ্যামাইটোসিস কাকে বলে এবং অ্যামাইটোসিসের স্থান, পদ্ধতি ও তাৎপর্য ? 

Leave a Comment