পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।

পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন :

ভূমিকা : বিংশ শতকে পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার ঘটে যা ব্রিটিশ সরকারের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে । লালা হরদয়াল, অজিত সিং, সুফি অম্বাপ্রসাদ, রাসবিহারী বসু প্রমুখ বিপ্লবীর উদ্যোগে পাঞ্জাব বিপ্লবের অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়।

1. সাহারাণপুর গুপ্তসমিতি : প্রবাসী বাঙালি জে এম চট্টোপাধ্যায় 1904 খ্রিস্টাব্দে কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে পাঞ্জাবের সাহারানপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি গড়ে তোলেন। এই সমিতিতে পরবর্তীকালে লালা হরদয়াল, সর্দার অজিত সিং, সুফি অম্বাপ্রসাদ প্রমুখ বিপ্লবী যোগ দেন। লালা লাজপৎ রায় এই সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। অজিত সিং ও অম্বাপ্রসাদ কয়েকটি বিপ্লবী পত্রিকা প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ স্বরাজ ’  ঝিঙ্গের-শিয়াল ’ প্রভৃতি।

পড়ুন : ভারতের বিপ্লবী স্বাধীনতা আন্দোলন

2. আর্য সমাজের ভূমিকা : আর্য সমাজের সক্রিয় সহযোগিতায় পাঞ্জাবে বেশ কয়েকটি গুপ্তসমিতি গড়ে ওঠে। এসব সমিতির সদস্যরা বোমা তৈরি, অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ প্রভৃতি কাজের সঙ্গে যুক্ত
ছিল। পাঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ও ‘ ডায়ার জানান যে, 1907 থেকে 1925 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পাঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের জন্য যে অসংখ্য হিন্দু অভিযুক্ত হয়েছিল তারা সকলেই আর্য সমাজের লোক ছিল।

3. হরদয়ালের ভূমিকা : লালা হরদয়াল 1908 খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে ফিরে এসে পাঞ্জাবে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের সহায়তায় 1913 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে ‘ গদর পার্টি ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতেও এর শাখা গড়ে ওঠে। পাঞ্জাব থেকে এই পার্টির সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘গদর’ প্রকাশিত হতে থাকে।

4. রাসবিহারী বসুর ভূমিকা : প্রবাসী বাঙালি বিপ্লবী রাসবিহারী বসু পাঞ্জাবের বিভিন্ন বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈপ্লবিক আদর্শের প্রচার শুরু করেন। তাঁর পরামর্শে তাঁর অনুগামী বসন্ত বিশ্বাস দিল্লিতে বড়োলাট লর্ড হার্ডিঞ্জের শোভাযাত্রায় বোমা নিক্ষেপ করে। রাসবিহারীর পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঞ্জাবের সহকারী পুলিশ কমিশনার গর্ডনকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাহোরের লরেন্স গার্ডেনে বিপ্লবীরা বোমা রাখেন। তিনি 1915 খ্রিস্টাব্দের 21 ফেব্রুয়ারি সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের গোপন পরিকল্পনা করেন। অবশ্য বাস্তবায়নের আগেই এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।

5. ভগৎ সিং-এর ভূমিকা : সাইমন কমিশন – বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে পাঞ্জাবের বিপ্লবী নেতা লালা লাজপৎ রায়ের মৃত্যু হয়। এর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী ভগৎ সিং, রাজগুরু ও আজাদ পুলিশ অফিসার সন্ডার্সকে হত্যা (1928 খ্রি.) করেন। পরের বছর ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লি আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ করেন। পরে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ভগৎ সিং, রাজগুরু ও শুকদেবের ফাঁসি (1931 খ্রি.) হয়।

মূল‍্যায়ন : পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ফলে সরকার বিপ্লবীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন শুরু করে। ধীরে ধীরে পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের গতি হ্রাস পায়।

পড়ুন : বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন 

2 thoughts on “পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন”

Leave a Comment