মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন :

ভূমিকা : বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের যথেষ্ট প্রসার ঘটে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন ভারতের মুক্তি সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

1. বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে : মহারাষ্ট্রের প্রখ্যাত বিপ্লবী ছিলেন বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে (1845-83 খ্রি.)। তিনি গুপ্ত বিপ্লবী দল গঠন করে যুবকদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবধারার প্রসার ঘটাতে থাকেন। তিনি ‘ রামোসিস ‘ নামে অনুন্নত সম্প্রদায়ের যুবকদের অস্ত্রশিক্ষা দেন। বৈপ্লবিক কার্যাবলির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে তিনি রাজনৈতিক ডাকাতি, সরকারি কোষাগার লুঠ, ধনীদের কাছ থেকে বলপূর্বক অর্থ আদায় প্রভৃতি শুরু করেন। অবশেষে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার (1879 খ্রি.) হলে বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ।

2. বালগঙ্গাধর তিলক : মহারাষ্ট্রে বিপ্লবী ভাবধারার প্রচারে চরমপন্থী নেতা বালগঙ্গাধর তিলকের (1856-1920 খ্রি.) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তিনি মহারাষ্ট্রের গণপতি উৎসবের প্রচলন করে দেবতা গণেশকে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকদের হাত থেকে ভারতের উদ্ধারকারী হিসেবে তুলে ধরেন। এ ছাড়া শিবাজি উৎসবের প্রচলনের দ্বারা তিনি মারাঠা জাতিকে নিজেদের গৌরবময় অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি ‘ কেশরী ’ ও ‘ মারাঠী ’ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।

3. চাপেকর ভ্রাতৃদ্বয় : দামোদর চাপেকর ও বালকৃয় চাপেকর নামে দুই ভাই মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের দুই বীর সৈনিক ছিলেন। প্লেগ কমিশনার মি. র‍্যান্ড ও তাঁর সহকারী আয়ার্স্ট বোম্বাইয়ে প্লেগ রোগ দমনের সময় সাধারণ মানুষের ওপর ভয়ানক অত্যাচার শুরু করলে চাপেকর ভ্রাতৃদ্বয় অত্যাচারী র‍্যান্ড ও আয়ার্স্টকে হত্যা (1897 খ্রি.) করে গা ঢাকা দেন। দুই বিশ্বাসঘাতকের সহায়তায় চাপেকর ভ্রাতৃদ্বয় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে বিচারে তাঁদের বিশ্বাসঘাতককে হত্যা করেন চাপেকরদের অপর ভাই বাসুদেব।

পড়ুন : ভারতের বীপ্লবী স্বাধীনতা আন্দোলন

4. বালসমাজ ও আর্যবান্ধর সমাজ : বিশ শতকের প্রথমার্ধে মহারাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি বিপ্লবী গুপ্তসমিতি গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বালসমাজ ও আর্যবান্ধব সমাজ। নাগপুর, অমরাবতী, ওয়ার্ধা প্রভৃতি শহরে বালসমাজের কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়ে। আর্যবান্ধব সমাজ দেশে সশস্ত্র বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটানোর উদ্দেশ্যে বিপ্লবীদের প্রস্তুত করতে থাকে।

5. ঠাকুর সাহেব : ঠাকুর সাহেব নামে বিপ্লবী বিশ শতকে মহারাষ্ট্রে অতি সক্রিয় বিপ্লবী কার্যকলাপ চালান। তিনি গুপ্তসমিতি গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিম ভারতে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

6. সাভারকার ভ্রাতৃদ্বয : মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন বিনায়ক দামোদর সাভারকার (1883-1966 খ্রি.) এবং তাঁর ভাই গণেশ সাভারকার। তাঁরা 1899 খ্রিস্টাব্দে নাসিকে মিত্রমেলা নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করে সেখানকার তরুণদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবধারার প্রসার ঘটান। 1904 খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ হয় অভিনব ভারত । সারা দেশে এর শাখা গড়ে ওঠে। বিনায়ক সাভারকার লন্ডনে গিয়ে বোমা তৈরির কৌশল, অস্ত্রশস্ত্র ও বিপ্লবীদের জীবনী রচনা করে ভারতে পাঠান। তাঁর অনুগামী বিপ্লবীরা বিচারক জ্যাকসনকে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিনায়ক সাভারকারের যোগ থাকার সম্ভাবনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ 26 বছর কারাদণ্ডের পর তিনি মুক্তি পান। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘ বীর সাভারকার ’ নামে পরিচিত।

মূল‍্যায়ন : মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকার তীব্র দমননীতি গ্রহণ করে। নাসিক ষড়যন্ত্র মামলায় (1910 খ্রি.) বহু বিপ্লবীকে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার করে তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করা হয়। তা সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন সারা দেশের বিপ্লবীদের মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল তাতে সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন :

পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

Leave a Comment