পরিণমন কাকে বলে ? পরিণমনের বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্ব

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

পরিণমন কাকে বলে ? পরিণমনের বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্ব

পরিণমন কাকে বলে : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে তোমাদের সাথে আলোচনা করব পরিণমন কাকে বলে ,পরিণমনের বৈশিষ্ট্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব সম্পর্কে।

পরিণমন  কাকে বলে :

পরিণমন বলতে বোঝায় দেহ ও মনের দিক দিয়ে পরিপক্কতা অর্জন করা । পরিণমন হল একটি স্বাভাবিক, স্বতঃস্ফূর্ত জৈবিক প্রক্রিয়া। পরিণমন কথার আক্ষরিক অর্থ পরিবর্তন।

স্কিনারের মতানুসারে, পরিণমন হল এর ধরনের বিকাশ যা পরিবেশগত অবস্থার ব্যাপক তারতম্য থাকলেও মোটামুটি একইভাবে সংঘটিত হয়।

মনোবিদ গেসেলের মতে, স্বকীয় ও অন্তর্জাত বৃদ্ধিই হল পরিণমন।

মনোবিদ কোলেনিকের মতে, জন্মগত প্রবণতাগুলি স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার ফলে শিশুর আচরণের গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় পরিণমন।

পরিণমনের বৈশিষ্ট্য :

পরিণমন হল এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জন্মগত প্রবণতার স্বাভাবিক বিকাশের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির আচরণের গুণগত ও পরিমাণগত উভয় প্রকারের পরিবর্তন সংগঠিত হয়। পরিণমনের বৈশিষ্ট্য গুলি হল-

1. বিকাশের প্রক্রিয়া : পরিণমন হল একটি বিকাশমূলক প্রক্রিয়া যার দ্বারা ব্যক্তির বৃদ্ধি সংগঠিত হয়।

3. স্বাভাবিক প্রক্রিয়া : পরিণমন প্রক্রিয়া শিশুর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হয়।

3. সহজাত প্রবণতার ওপর নির্ভরশীলতা : পরিণমন প্রক্রিয়া শিশুর সহজাত প্রবণতার ওপর নির্ভরশীল। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সম্ভাবনাগুলির বিকাশের ওপর পরিণমন নির্ভর করে।

4. সর্বজনীন প্রক্রিয়া : দেশ, কালভেদে, পরিনমনের কোন পরিবর্তন ঘটে না। পৃথিবীর সমস্ত শিশুরাই প্রথমে হামাগুড়ি দেয়, তারপর দাঁড়াতে শেখে, তারপর সবশেষে হাঁটতে শেখে।

5. প্রশিক্ষণনির্ভর : পরিণমন ঘটার জন্য কোনো প্রকার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। এই প্রক্রিয়া কোন ব্যক্তি বা সমাজের চাহিদা, ইচ্ছা, অবস্থা, কোনো কিছুর ওপর নির্ভরশীল করে না।

6. শারীরিক সহায়তা : পরিণমন ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

7. চাহিদানির্ভর নয় : পরিণমন প্রক্রিয়া শিশুর চাহিদার ওপর নির্ভরশীল করে না। এটি সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে সংগতি রেখেও ঘটে না।

8. সক্রিয়তাভিত্তিক নয় : পরিণমন প্রক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার জন্য ব্যক্তির আত্মসক্রিয়তার কোনোরকম প্রয়োজন হয় না।

9. পরিকল্পনামাফিক শিক্ষাদান : পরিণমনের উপর নির্ভর করে শিক্ষাপরিকল্পনা। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিশুর পরিকল্পনামাফিক শিক্ষাদান করা হয়।

উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে , পরিগমন হল ব্যক্তির জীবনবিকাশের একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া যা তার আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। এটি একটি স্বাধীন ও সর্বজনীন প্রক্রিয়া।

পড়ুন : স্মৃতি কি 

শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব :

শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব গুলি হল-

1. আচরণের পরিশীলতা : পরিণমনের ফলে পরিবর্তিত আচরণগুলির উপযুক্ত শিখন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিশীলতা করতে হবে।

2. পরিণমনভিত্তিক শিক্ষা গ্ৰহন : উপযুক্ত পরিণমন না ঘটলে শিশু যথাযথভাবে পাঠ গ্রহণ করতে পারে না । সেই কারণে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক পরিণমনের প্রতি নজর রেখে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার পরিকল্পনা করতে হবে ।

3. পরিণমনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা : জীবনবিকাশের দুটি স্তরে ( শৈশব ও বয়ঃসন্ধিক্ষণ ) পরিণমনের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়। এই স্তর দুটিতে পরিণমন যাতে সঠিকভাবে সংগঠিত হয় এবং পরিণমন অনুযায়ী যাতে শিক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা করা যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

আরও পড়ুন : 

মনোযোগ কাকে বলে ? মনোযোগের শ্রেণীবিভাগ, প্রকৃত, বৈশিষ্ট্য ও শর্ত

Leave a Comment