বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের অবদান

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের অবদান

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের অবদান : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের অবদান সম্পর্কে। আর দেরি না করে দেখে নেওয়া যাক আজকের মূল আলোচনাটি।

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের অবদান :

ভূমিকা : বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলতে যে সকল চলচ্চিত্র পরিচালকের নাম মনে আসে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মৃণাল সেন । তিনি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক ছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরে 1923 খ্রীস্টাব্দের 14 মে এক বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে অবশ্য এই বাংলায় চলে আসেন।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র : মৃণাল সেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক ব্যতিক্রমী পরিচালক। 1955 খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’ এবং 2002 খ্রিস্টাব্দে শেষ চলচ্চিত্র ‘আমার ভুবন’ মুক্তি পায়। তাঁর চলচ্চিত্রের অধিকাংশই স্মরণীয়, সমৃদ্ধ এবং বাঁক বদলের ইতিহাস। প্রথম ছবিকে তিনি নিজেই জঘন্য ছবি বলেছিলেন। ‘নীল আকাশের নীচে’ ,’বাইশে শ্রাবণ’ , ‘পুনশ্চ’ , ‘অবশেষে’ , ‘প্রতিনিধি’ , ‘আকাশ – কুসুম’ , ‘ভুবন সোম’ , ‘কোরাস’ , ‘মৃগয়া’ , ‘ওকা উরি কথা’ ,  ‘পরশুরাম ‘ , ‘একদিন প্রতিদিন’ , ‘কলকাতা 71’ ‘আকালের সন্ধানে’ , ‘খারিজ’ , ‘খন্ডহর’ , ‘একদিন অচানক’ , ‘মহাপৃথিবী’ , ‘অন্তরীন’ ,  ‘আমার ভুবন’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র এবং সিটি লাইফ চিত্রমালা  ‘ক্যালকাটা মাই এলডোরাডো’ বা ভারতীয় ইতিহাসের পাঁচ হাজার বছর নিয়ে তথ্যচিত্র ‘মুভিং পারস্পেকটিভ’ তাঁকে চিরকালীনতা দিয়েছে।

গুরুত্ব : মৃণাল সেনের ছবি বিশ্বমানবসমাজের রূপ-গুণ-স্বভাব- চরিত্রের প্রকাশক, মানুষের জীবনজিজ্ঞাসারক্রমপরিণামের দ্রষ্টা। সমালোচকের মতে তাঁর ছবিগুলো জীবন-শিল্প-চলচ্চিত্র জগতে এক দার্শনিক পরিক্রমা। পরিচালক যদিও মনে করেন ‘আমার একটাও ছবি নেই যা নির্ভুল। ‘ মৃণাল সেনের এই অতৃপ্তিই তাঁকে বাংলা তথা ভারতীয় তথা বিশ্বচলচ্চিত্রের জগতে এক মাইল ফলকরূপে গড়ে তুলেছে।

সম্মান ও পুরস্কার : মৃণাল সেন তাঁর কৃতিত্বের শিরোপা স্বরূপ বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন । ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি
প্রদান করে সম্মান জ্ঞাপন করেছে। এছাড়াও 2005 সালে তিনি দাদাসাহেব পুরস্কার লাভ করেন। এর পাশাপাশি 198 থেকে 2003 সাল পর্যন্ত ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্য পদ অলংকৃত করেছিলেন তিনি। ফরাসি সরকার তাঁকে কমান্ডার অব দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার ‘ ( Ordre desArts at des Arts ) সম্মান প্রদান করে, এটি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান। 2000 সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন। এমনই নানা পুরস্কার ও সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন মৃণাল সেন।

মূল্যায়ন : মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রগুলি কোলাজধর্মী; সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার বাস্তব চিত্র পাওয়া যায় কোনো কোনোওটিতে। তবে, পরের দিকের ছবিগুলিতে মধ্যবিত্ত মনোজগতের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, জটিলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। মার্কেট পলিসি তাঁর সিনেমাকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করেনি, তাঁর সিনেমা শুরু থেকেই একটা ধ্রুপদী ঘরানার পথ অনুসরণ করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁর সিনেমা সাড়া ফেলেছিল। ‘নীল আকাশের নীচে‘ মানুষ যেন একটা ক্ষতের মতো পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আছে। এসবের মধ্যে দাঁড়িয়ে তার চলচ্চিত্র যেন একটা বার্তা দিতে চাই।

আরও পড়ুন :

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তপন সিংহের অবদান

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত‍্যজিৎ রায়ের অবদান

2 thoughts on “বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের অবদান”

Leave a Comment