লাইসোজোম কাকে বলে : লাইসোজোম হল একটি ঝিল্লি অবদ্ধ কোষের অর্গানল যা পাচক এনজাইম ধারণ করে। এই লাইসোজোম বিভিন্ন কোষ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তারা অতিরিক্ত বা জীর্ণ কোষ ভাঙতে সাহায্য করে। 1955 সালে দ্য দুভে লাইসোজোম আবিস্কার করেন। আজকের আলোচনার বিষয় হল লাইসোজোম কাকে বলে এবং লাইসোজোমের অবস্থান, গঠন ও কাজ সম্পর্কে।
লাইসোজোম কাকে বলে :
প্রাণীকোশের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থিত , একক পর্দাবৃত , আর্দ্রবিশ্লেষক উৎসেচক সমন্বিত , অন্তঃকোশীয় ও বহিঃকোশীয় পরিপাক নিয়ন্ত্রণকারী থলি সদৃশ অঙ্গাণুকে লাইসোজোম বা লাইসোসোম বলে।
লাইসোজোমের অবস্থান :
প্রোটোজোয়া – সহ অধিকাংশ প্রাণীকোশে লাইসোজোম দেখা যায় । বেশ কিছু ছত্রাক ( যেমন- ঈস্ট ) , ভুট্টার মূলাগ্রের কোশ ও মটর বীজের কোশেও এটি দেখা যায়।
লাইসোজোমের গঠন :
1. লাইসোজোম দেখতে অনেকটা গহ্বরের মতো বা থলির মতো হয়।
2. লাইসোজোমের একক পর্দাবেষ্টিত থাকে।
3. পর্দা ঘেরা গহ্বরের মধ্যে গাঢ় সমসত্ত্ব তরল থাকে । এই তরলে প্রায় 40 প্রকারের অ্যাসিড হাইড্রোলেজ উৎসেচক থাকে । যথা- প্রোটিয়েজ , লাইপেজ , নিউক্লিয়েজ , গ্লাইকোসাইডেজ প্রভৃতি।
4. লাইসোজোমের অভ্যন্তরীণ গঠন অনির্দিষ্ট এবং পরিবর্তনশীল । এর মধ্যে অনেক সময়ে দানাদার পদার্থ , অপাচিত বস্তু প্রভৃতি থাকে।
লাইসোজোমের কাজ :
লাইসোজোমের কাজ বা বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
1. বহিঃকোশীয় ও অন্তঃকোশীয় পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে।
2. রোগাক্রান্ত অবস্থায় কোশ – অঙ্গাণুগুলিকে পাচিত করে।
3. কোশের জীর্ণ অক্ষম অঙ্গাণুকে ধ্বংস করে একে অটোফ্যাগি বলা হয়।
4. রোগজীবাণু ধ্বংস করে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।
5. লাইসোজোম ভ্রূণের বৃদ্ধির সময়ে খাদ্য সরবরাহ করে।
6. এরা কোষীয় ক্যারোটিন প্রস্তুত করে ও ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন :
গলগি বডি কাকে বলে ? অবস্থান, গঠন ও কাজ
নিউক্লিয়াস কাকে বলে ? অবস্থান, গঠন ও কাজ
প্রশ্ন :
1. লাইসোজোম কে আবিস্কার করেন ?
উ: 1955 সালে দ্য দুভে লাইসোজোম আবিস্কার করেন।
2. আত্মঘাতী থলি কাকে বলা হয় ?
উ: লাইসোজোমকে
3. লাইসোজোমকে আত্মঘাতী থলি বলা হয় কেন ?
উ: উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষ দুটোটেই লাইসোজোম পাওয়া যায় এই লাইসোজোমের প্রধান কাজ হল বাইরে থেকে আগত জীবাণু গুলিকে ধ্বংস করা। লাইসোজোমের ভিতরে একধরনের জীবাণু হজমকারী এনজাইম থাকে যার দ্বারা লাইসোজোম কোষে প্রবেশকারী জীবাণু গুলিকে হজম করে নেই। এই এনজাইম গুলো একটি পর্দা দ্বারা অন্য কোষীয় অঙ্গানু গুলি দ্বা পৃথক থাকে। কিন্তু কোষে অক্সিজেনের গাটতি হলে হজমকারী এনজাইম গুলির পৃথক পর্দাটি নষ্ট হয়ে যায় তখন এনজাইম গুলি লাইসোজোম থেকে কোষের সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। এই এনজাইম গুলি কোশের ভিতরে থাকা অন্যান্য কোষীয় অঙ্গানু গুলিকে জীবাণুর ন্যায় হজম করে নেই এবং তখন কোষটির মৃত্যু ঘটে । এই জন্যই লাইসোজোমকে আত্মঘাতী থলি বা সুইসাইড ব্যাগ বলা হয়।