ডেঙ্গু জ্বর রচনা PDF | dengue Jor Rachana

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

ডেঙ্গু জ্বর রচনা PDF | dengue Jor Rachana

ডেঙ্গু জ্বর রচনা : সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে ডেঙ্গু জ্বর রচনা টি সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যা তোমাদের জন‍্য খুবই সাহায্যকারী হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ডেঙ্গু জ্বর রচনা টি।

প্রথম উত্তর 

ডেঙ্গু জ্বর রচনা :

ভূমিকা : ডেঙ্গু’ একটি স্প্যানিশ শব্দ। এর অর্থ হাড়ভাঙা জ্বর। ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা খালি চোখে দেখে চেনা যায়। মশার দেহে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। যখন কোনো অঞ্চলে ডেঙ্গু প্রবেশ করে তখন একের পর এক বাড়িতে এই জ্বর প্রবেশ করে। বহু সময় মড়ক লেগে যায় এর অতিরিক্ত প্রভাবে।

রোগের লক্ষণ : ডেঙ্গি ভাইরাস মশা থেকে হয়, এডিস ইজিপ্টি দ্বারা বাহিত হয়। এই মশা ভোরবেলা এবং মাঝ রাতের পর কমড়ায়। বেশিরভাগ সময় এক কামড়েই সংক্রমণ হতে পারে। এই মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যায়। এবং ওই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যখন কোনো জীবাণুবিহীন মশা কামড়ায়, তখন সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়।

প্রকারভেদ : ডেঙ্গু জ্বর দুধরনের। ১. ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর ২. হেমোরেজিকডেঙ্গু জ্বর। আবার হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরের চারটি ধাপ আছে – গ্রেড ১, গ্রেড ২, গ্রেড ৩ ও গ্রেড ৪ । ডেঙ্গু ভাইরাসের আবার চারটি সেরোটাইপ রয়েছে, DEN-1, DEN 2, DEN-3 এবং DEN-4। তবে DEN-2 এবং DEN-3 সবচেয়ে মারাত্মক সেরোটাইপ হিসাবে মনে করা হয়।

ডেঙ্গুর উদ্ভব : ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনার প্রথম বিবরণ পাওয়া জিন বংশের (২৬৫-৪২০ খ্রীষ্টাব্দ) এক চীনা মেডিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়ায়। ১৮২৮ সালে ডেঙ্গু শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। ডেঙ্গু মহামারির তথ্য প্রথম পাওয়া যায় ১৭৭৯ ও ১৭৮০ সালে এশিয়া আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার মহামারির সময়ে। ১৯৭০ সালে আমেরিকা ও প্ৰশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাবকে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হয়েছিল।

রোগের লক্ষণ : হঠাৎ করেই জ্বর চলে আসে, বমি বমি ভাব আসে, বমির সাথে রক্তপাত হয়, দাঁতে ভীষণ পরিমাণে ব্যথা হয়, নাক দিয়ে রক্ত পরতে পারে। চামড়া ছোটো ছোট অনেক ফুসকুড়ি গজিয়ে ওঠে। শক সিনড্রোম হয়ে গেলে দেহের কোনো অঙ্গে ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ পৌঁছাতে পারে না, তখন অরগান ফেল করে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে মান্টি অরগান ফেইলর বলে।

আক্রান্তের চিকিৎসা : ক্লাসিক্যাল ও গ্রেড-১ হেমোরেজিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে বাড়িতেই চিকিৎসা করা যায়। বেশিরভাগ সময়ে এ ধরনের রোগী ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। গ্রেড-২, ৩ ও ৪ হেমোরেজিক আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ডাবের জল, ফলের জুস সুস্থ হতে অনেক ভালো কাজ করে। মশারী টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

প্রতিরোধের উপায় : প্রধান কাজ হলো মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। টব, ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার, নির্মাণাধীন বাড়ির চৌবাচ্চা ইত্যাদি স্থানে জল জমতে দেওয়া যাবে না। রাত্রে ঘুমানোর সময় মশারী টাঙানো উচিত। না হলে মশা না কামড়ানোর জন্য ক্রিম মেখে নিতে হবে। মশার কয়েল, ম্যাট এর ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে।

সময়কাল : প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ মশাবাহিত রোগের ফলে মারা যাচ্ছে। গত ৩০ বছরে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার পৃথিবীতে ৩০ গুণ বেড়েছে এবং তা প্রায় ১০০ টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

সচেতনতা : সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে এখনো ভীষণ ভাবে অসচেতন। এর নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন নেই। সুনির্দিষ্টভাবে ওষুধও নেই। তবে মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ আমাদের চারপাশে আছে। জ্বর হলেও এখনো ৪ থেকে ৫ দিন বহু বাড়িতেই প্যারাসিটামল খাওয়া হয়, এটা বন্ধ করতে হবে।

উপসংহার : শুধু মানুষের সচেতনতা বাড়ালেই হবে না। সরকার থেকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ডেঙ্গুর প্রভাব গুলি দেখাতে হবে। জ্বর কমে যাওয়ার পরই মূলত ক্রিটিক্যাল ফেইজ শুরু হয়। তাই জ্বর কমলেই ভাল হয়ে গেল সব কিছু এটা মনে করবেন না।

দ্বিতীয় উত্তর 

ডেঙ্গু জ্বর রচনা :

ভূমিকা :  ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মধ‍্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যাথা এবং চামড়াতে ফুসকুড়ি। ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে।

ডেঙ্গুজ্বরের ফলে রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায়, কখনো রক্তক্ষরণ দেখা যায়। এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশাকী (স্ত্রী মশা) প্রধান। ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। কয়েক ধরনের টেস্টের মাধ্যমে, যেমন- ভাইরাসটি বা এর RNA প্রতিরোধী এন্টিবডির উপস্থিতি দেখেও ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা যায়। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এই টিকা শুধু একবার সংক্রমিত হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর।

বিভ্রান্তি ও সচেতনতা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গুকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ডেঙ্গু জ্বরে যখন অনেকে আক্রান্ত হয় ও চারদিকে ডেঙ্গু-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তখন জ্বর হোক বা না হোক, অনেকেই হাসপাতালে ছোটে পরীক্ষার জন্য। নিজেই পরীক্ষা করান। পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে কেউ আবার বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যাপারে একটু তথ্য জেনে রাখা ভালো।

প্রথমত : জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যেকোনো জ্বরই যে ডেঙ্গু, তা-ও নয়।

দ্বিতীয়ত : ডেঙ্গু জ্বরে প্রথম দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কাজেই নিজে নিজে পরীক্ষা করালে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে চিকিৎসককে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে, ঠিক কবে প্রথম জ্বর এসেছিল, মনে রাখুন। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্লাটিলেট কমে যায়। ফলে মানুষ ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি শুরু করে। এমন অবস্থায় অন্য কোনো কারণে রোগী মারা গেলেও রোগীর আত্মীয়স্বজন মনে করেন, প্লাটিলেট কমে গেছে বলে রোগী মারা গেছেন। ডেঙ্গুর ব্যপারে এই ধারণা মোটেই ঠিক নয়৷ রোগীর প্লাটিলেট ৫,০০০-এর নিচে হলেও শান্ত থাকতে হবে। শুধু প্লাটিলেট কমার কারণে রক্তক্ষরণ হয় না৷

তবে ডেঙ্গুতে তখনই রোগীর অবস্থায় অত্যাধিক জটিলতা বা মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে – যদি রোগী ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা করে, বিশ্রাম না নেয় যথাসময়ে ডাক্তারের কাছে না যায়, হাসপাতালে না যায়।

প্রতিকার : মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে, মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী বিভিন্ন আধারে, যেমন- কাপ, টব, টায়ার, ডাবের খোসা,গর্ত,ছাদ প্রভৃতিতে আটকে থাকা জল যেন জমতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্যান্য মহাদেশের ১১০ টিরও অধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ প্রতি বছর ৫ থেকে ৫০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয় এবং তাদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ হাজারের মতো মানুষ মারা যায়।

১৭৭৯ সালে ডেঙ্গুর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। বিংশ শতকের প্রথমভাগে ডেঙ্গুর ভাইরাসের উৎস ও সংক্রমণ বিষয়ে জানা যায়। মশা নিধনই বর্তমানে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। সরাসরি ডেঙ্গু ভাইরাসকে লক্ষ্য করে ওষুধ উদ্ভাবনের গবেষণাও চলছে।

উপসংহার : সিটি কর্পোরেশনের চলমান ব্যবস্থায় সফলভাবে মশা নিধন সম্ভব নয়। মশা একটা ছোট পতঙ্গ, এর দমনপদ্ধতি হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত। এই সমস্যা পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। কোনো কোনো দেশে এই সমস্যা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। সেজন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মশা দমনের নানা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি তৈরি হচ্ছে। আমাদেরও উন্নত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে।

PDF DOWNLOAD ZONE

File Name : ডেঙ্গু জ্বর রচনা
Language : বাংলা
Size : 55 KB
Click Here To Download

আরও দেখুন :

বাংলার উৎসব রচনা 

চন্দ্রযান ৩ রচনা 

Leave a Comment