লাইটিক চক্র কাকে বলে ? লাইটিক চক্রের পর্যায় | What is the lytic cycle

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

লাইটিক চক্র কাকে বলে : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে আলোচনা করলাম লাইটিক চক্র কাকে বলে এবং লাইটিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে।চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।

লাইটিক চক্র কাকে বলে ? লাইটিক চক্রের পর্যায় | What is the lytic cycle

লাইটিক চক্র কাকে বলে :

যে পদ্ধতিতে ফাজ ভাইরাস পোষক ব্যাকটেরিয়া কোশে প্রবেশ করে জনন সম্পন্ন করে ও অপত্য ভাইরাসগুলি পোষক দেহের বিদারণ বা লাইসিস ঘটিয়ে নির্গত হয়, তাকে লাইটিক চক্র বলে।

E. coli (Escherichia coli) নামক ব্যাকটেরিয়ায় T-even ফাজ লাইটিক চক্রের (lytic cycle) মাধ্যমে প্রজনন সম্পন্ন করে। লাইটিক চক্রের পর্যায়গুলি নীচে আলোচনা করা হল-

লাইটিক চক্রের পর্যায় : 

1. পৃষ্ঠলগ্নীভবন : প্রথমে ফাজ ভাইরাস পোষক ব্যাকটেরিয়ার কোশ প্রাচীরের সংস্পর্শে আসে। ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট গ্রাহীস্থানে ভাইরাসটি পুচ্ছ তন্তুর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়। T2 ফাজের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার কোশপ্রাচীরের টিকোয়িক অ্যাসিড, লাইপোপলিস্যাকারাইড গ্রাহীরূপে  কাজ করে।

2. পুচ্ছতন্তুর সংকোচন : এই পর্যায়ে ফাজ ভাইরাসের পুচ্ছতন্তু গুলি সংকুচিত হয় এবং পাদফলকটি ব্যাকটেরিয়ার কোশপ্রাচীরের সংস্পর্শে চলে আসে। এই সময়ে পুচ্ছ তন্তু গুলিকে উপরে উঠে আসতে দেখা যায়।

3. DNA অণু সূচিবিদ্ধকরণ : পুচ্ছতন্তু আরও সংকুচিত হয়ে পুচ্ছনলটিকে কোশপ্রাচীরের সংলগ্ন করে। ভাইরাসের পুচ্ছ থেকে লাইসোজাইম উৎসেচক নিঃসৃত হয় যা ব্যাকটেরিয়ার মিউকোপেপটাইড স্তরকে দ্রবীভূত করে সূক্ষ্ম নালিকার সৃষ্টি করে-এই প্রক্রিয়াকে ড্রিলিং বলে। এই নালিকা বা ছিদ্রের মধ্য দিয়ে ভাইরাস তার পুচ্ছ নালিকাটি প্রবেশ করায় এবং ভাইরাসটি এই নালিকাপথে DNA অণুটিকে পোষক ব্যাকটেরিয়া কোশে প্রবিষ্ট করায়। বিজ্ঞানী হারসে ও চেস (Hershey and Chase 1952) ভাইরাসের প্রোটিন আবরণীকে 35S এবং DNA অণুকে 32P দিয়ে চিহ্নিত করে দেখান যে 32P দিয়ে লেবেল করা DNA অণুটিই পোষকের দেহে প্রবেশ করে কিন্তু 355 যুক্ত প্রোটিন ক্যাপসিডটি পোষক ব্যাকটেরিয়ার বাইরে থেকে যায়।

4. প্রাথমিক স্তরের প্রোটিন সংশ্লেষ : ভাইরাস DNA অণুটি পোষক ব্যাকটেরিয়ায় প্রবেশ করে ব্যাকটেরিয়ার রাইবোজোমকে ব্যবহার করে প্রাথমিক স্তরে কয়েকটি প্রোটিন সংশ্লেষ করে। এগুলি হল-

A. DNase : এই উৎসেচকটি ব্যাকটেরিয়ার DNA অণুকে ধ্বংস করে। ভাইরাল DNA অণুতে সাইটোসিনের পরিবর্তে 5-হাইড্রক্সিমিথাইল সাইটোসিন থাকায় ভাইরাল DNAটি এই উৎসেচকের দ্বারা বিনষ্ট হয় না।

B. RNase : এই উৎসেচকের প্রভাবে ব্যাকটেরিয়ার RNA অণুগুলিও ধীরে ধীরে বিনষ্ট হতে থাকে। দেখা গেছে যে ফাজ ভাইরাস পোষক দেহে প্রবেশ করার তিন মিনিটের মধ্যেই ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক ক্রিয়াশীলতাকে বন্ধ করে দেয়।

C. ডিঅক্সিসাইটিডিন ট্রাইফসফাটেজ : এই উৎসেচকটি সংশ্লেষ হওয়ার ফলে ভাইরাল DNA-তে সাইটোসিন ক্ষারীয় মূলরূপে যুক্ত হতে পারে না।

D. ভাইরাল DNA পলিমারেজ : ভাইরাল জিনের প্রভাবেই এই উৎসেচকের সংশ্লেষ ঘটে। এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসেচকটি পোষকদেহে প্রবেশ করার 5 মিনিটের মধ্যেই প্রবিষ্ট ভাইরাল DNA থেকে 6-10 কপি DNA অণুর প্রতিলিপি গঠন করে। দেখা গেছে যে প্রাথমিক স্তরে উৎপাদিত DNA অণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কনক্যাটামার গঠন করে। পরে, অপত্য DNA অণুগুলি পৃথক হয়ে যায়। DNA পলিমারেজের প্রভাবে প্রতিটি ব্যাকটেরিয়ায় 100-200টি ফাজ DNA অণু গঠিত হয়।

5. বিলম্বিত পর্যায়ের প্রোটিন সংশ্লেষ : সদ্য উৎপন্ন ভাইরাল DNA অণুগুলি RNA অণু সৃষ্টি করে যা পোষক রাইবোজোমের সাহায্যে শেষ পর্যায়ের প্রোটিনগুলি সংশ্লেষ সম্পন্ন করে। এই প্রোটিনগুলি হল-

A. ভাইরাল কোট প্রোটিন : T4 ফাজের আনুমানিক 50টি জিন সক্রিয় হয়ে ভাইরাসের ক্যাপসুল বা কোট প্রোটিন সংশ্লেষ করে। দেখা গেছে যে 21টি জিন ফাজ ভাইরাসের পুচ্ছ গঠন করে। ৪টি জিন অসম্পূর্ণ মস্তক বা প্রোহেড গঠন করে যা আবার অন্য ৭টি জিনের প্রভাবে পূর্ণতা লাভ করে। অন্তত 6টি জিন পুচ্ছতন্তু গঠনকারী প্রোটিন সংশ্লেষ করে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে পুচ্ছ, পুচ্ছতন্তু ও মস্তক গঠনকারী প্রোটিনগুলি পৃথক পৃথকভাবে সংশ্লিষ্ট হয় ও পরে এই তিনটি অংশ সংযুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ ক্যাপসুল বা প্রোটিন খোলকটি গঠন করে। মস্তক গঠিত হওয়ার সময়েই দ্বিতন্ত্রী DNA অণুর (যা পূর্ববর্তী পর্যায়ে সংশ্লেষিত হয়েছিল) একটি কপি মস্তকে প্রবেশ করে। এইভাবেই পোষক ব্যাকটেরিয়ায় অসংখ্য অপত্য ভাইরাস পূর্ণতালাভ করে।

B. লাইসোজাইম : সবার শেষে লাইসোজাইম উৎসেচকের সংশ্লেষ ঘটে যা পোষকের পেপটাইডোগ্লাইক‍্যানের গ্লাইকোসাইডিক বন্ধনী ভেঙে দেওয়ায় ব‍্যাকটেরিয়ায় কোশপ্রাচীর দ্রবীভূত হয়।

আরও পড়ুন :

ভাইরাস কাকে বলে ? 

2 thoughts on “লাইটিক চক্র কাকে বলে ? লাইটিক চক্রের পর্যায় | What is the lytic cycle”

Leave a Comment