বিশ্ব উষ্ণায়ন কি বা কাকে বলে | বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ | What is global warming

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বিশ্ব উষ্ণায়ন কি বা কাকে বলে

বিশ্ব উষ্ণায়ন কি : সুপ্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পর্বটিতে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম বিশ্ব উষ্ণায়ন কি বা কাকে বলে এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ সম্পর্কে।

◆ বিশ্ব উষ্ণায়ন কি :

বর্তমান সময়ে মনুষ্য সমাজের নিকট এক অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সমস্যা রূপে উদ্ধৃত হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)। বিশ্ব উষ্ণায়ন কেবলমাত্র একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়, এই বিশ্ব উষ্ণায়ন মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে বায়ুমন্ডলীয় তাপমাত্রার ক্রমান্বয় বৃদ্ধিকে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাকেই এক কথায় বলা হয় বিশ্ব উষ্ণায়ন

◆ বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে :

পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এটাই Global Warming বা বিশ্ব উষ্ণায়ন। সূর্য থেকে আগত তাপশক্তি পৃথিবীপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং এই বিকিরিত তাপশক্তির অধিকাংশই পুনরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে যায়। কিন্তু মানবসৃষ্ট দূষণ এবং অরণ‍্য কাটার করার ফলে বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ আশঙ্খাজনিতভাবে বেড়ে চলেছে। এর ফলে বিকিরিত তাপশক্তি পুনরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে যাওয়ার পথে বাধাগ্রস্থ হয় এবং এভাবেই বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global warming নামে পরিচিত।

◆ বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ :

পৃথিবীতে বিশ্ব উষ্ণায়ন দুই প্রকার কারণের মাধ‍্যমে হয়ে চলেছে সেগুলি হল-

A. বিশ্ব উষ্ণায়নে মনুষ্য সৃষ্টি কারণ :

১. জীবাশ্ম জ্বালানি : বিভিন্ন যানবাহনের এবং বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের  কর্মক্ষেত্র গুলিতে অতিরিক্ত পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে সেখান থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়েই চলেছে। এই অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে চলা কার্বন ডাই অক্সাইড বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধির অন্যতম একটি প্রধান কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

২. অরণ‍্য ছেদন : জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় কাঠের ব্যবহার, জনবসতি বৃদ্ধি, কৃষি জমির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা, শিল্পকারখানা গুলির প্রসার ইত্যাদি নানান কারণে অতিরিক্ত মাত্রায় গাছ কাটার ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড বনভূমি দ্বারা শোষিত হতে পারছে না। যার ফলে বাতাসে অক্সিজেন এর মান কমছে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মান দ্রুততম বাড়ছে।

৩. মিথেন গ্যাসের অত‍্যাধিক ব্যবহার : মিথেন হলো প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস গুলির মধ্যে অন্যতম একটি। কৃষি জমিতে জমে থাকা জল, গবাদি পশুর মল মুত্র এবং বিভিন্ন পচনশীল আবর্জনা থেকে সৃষ্ট মিথেন গ্যাস বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ব্যবহার : এখনকার দিনে প্রচুর পরিমাণে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশন মেশিন, রুম হিটার ইত্যাদি ইলেকট্রনিক শিল্প গুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন নির্গত হয় এবং প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতেও প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ব্যবহৃত হচ্ছে যা বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়াতে মারাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করে।

৫. শিল্পদানবের ক্রমবর্ধন : শিল্পায়নের আগমনে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর দূষক পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। 2013 সালে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আন্তঃসরকারি প্যানেল রিপোর্ট করেছে যে 1880 থেকে 2012 সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি 0.9°C সেলসিয়াস হয়েছে। যা শিল্পায়নের পূর্বের গড় তাপমাত্রার তুলনায় বৃদ্ধি 1.1°C ।

৬. কৃষিক্ষেত্রের ক্লেশ : কৃষিক্ষেত্রে আগাছা-লতা পাতার পচন, গৃহস্থ বিভিন্ন বর্জ্য, কৃষিজাত বর্জ্য পদার্থ এবং বিভিন্ন জীবজন্তুর বর্জ্য থেকে ব্যাপক পরিমানে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে বায়ুমণ্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাস উৎপন্ন করে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ায় ।

৭. জগতে জনবিস্ফোরন : পৃথিবীতে প্রানবায়ু অক্সিজেনের পরিমান সীমিত হওয়ার দরুন ব্যাপক জনসমুদ্র থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড পৃথিবীর দম আটকাতে সফল। এর ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান স্বাভাবিকের থেকে অনেকগুন বেড়ে গিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য প্রধান কারন হয়ে দাঁড়ায়।

B. বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রাকৃতিক কারণ :

১. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত : আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক অবদান রাখে । আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত ছাই, সালফারের কনা এবং ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে মিশে যায় এবং জলবায়ুকে প্রভাবিত করে।

২. জলীয় বাষ্পের বলয় : জলীয় বাষ্প এক ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে, জলাশয় থেকে আরও বেশি জল বাষ্পীভূত হয় এবং বায়ুমণ্ডলে থাকে যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।

৩. ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত মৃত্তিকা : হিমায়িত মাটি যাতে পরিবেশগত গ্যাসগুলি বেশ কয়েক বছর ধরে আটকে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে উপস্থিত থাকে। এটি হিমবাহে বিদ্যমান। পারমাফ্রস্ট গলে যাওয়ার সাথে সাথে এটি বায়ুমণ্ডলে গ্যাসগুলিকে আবার ছেড়ে দেয়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

৪. দাবানল : বনে দাবানলের ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বনযুক্ত ধোঁয়া যেমন- কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, মিথেন ও প্রচুর এরোসেল নির্গত করে। এই গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয় এবং এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

আরও পড়ুন :

পরিবেশ দূষণ কাকে বলে ? পরিবেশ দূষণের কারণ ও ফলাফল ?

Leave a Comment