সরল ফল কাকে বলে ? সরল ফলের প্রকারভেদ

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

সরল ফল কাকে বলে : সুপ্রিয় বন্ধুরা এই পর্বটিতে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম সরল ফল কাকে বলে এবং সরল ফলের প্রকারভেদ সম্পর্কে। আসুন দেখে নেওয়া যাক সরল ফল কাকে বলে।

সরল ফল কাকে বলে ? সরল ফলের প্রকারভেদ

সরল ফল কাকে বলে :

একটি ফুলের এক বা একাধিক যুক্তগর্ভপত্রী এক প্রকোষ্ঠযুক্ত ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন একটি ফলকে সরল ফল বলে। উদাহরণ – আম, মটর, ধান ইত্যাদি।

সরল ফলের প্রকারভেদ :

সরল ফল দু-রকমের, যথা- 1. নীরস2. সরস বা রসাল

1. নীরস ফল :

এইরকম ফল রসহীন, শুষ্ক প্রকৃতির। বিদারণের প্রকৃতি অনুসারে নীরস ফল বিদারী, অবিদারী ও ভেদক- এই ফলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা-

i. বিদারী ফল : যে সব ফলের ফলত্বক বিদীর্ণ হয়ে বীজগুলি ছড়িয়ে পড়ে, তাদের বিদারী ফল বলে। বিদারী ফল চার রকমের হয়। যথা- a. লেগিউম (মটর, শিম), b. ফলিকল (আকন্দ, নয়নতারা), c. সিলিকুয়া (সরষে, মুলো), d. ক্যাপসুল (ঢ্যাঁড়শ, কার্পাস)।

a. লেগিউম : এক্ষেত্রে পরিপক্ব ফলের অক্ষ ও পৃষ্ঠ উভয় সন্ধি বরাবর স্থানে লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়। যেমন- মটরশুঁটি, শিম ইত্যাদি।

b. ফলিকল : এক্ষেত্রে ফল পরিপক্ব হলে ফলত্বক কেবল অঙ্কসন্ধি বরাবর স্থানে লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়। যেমন—আকন্দ, নয়নতারা।

c. সিলিকুয়া : এক্ষেত্রে ফল পরিপক্ব হলে ফলত্বক নীচ থেকে ওপরের দিকে ফেটে যায়। বীজগুলি রেপলাম নামক কৃত্রিম প্রাচীরের গায়ে লেগে থাকে। যেমন- সরষে ও মুলো।

d. ক্যাপসুল : এক্ষেত্রে ফল পরিপক্ব হলে ফলটি বিভিন্ন দিক থেকে লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়। যেমন- ট্যাড়শ, কার্পাস, ফরমিয়াম ইত্যাদি।

ii. অবিদারী ফল : যে সব ফলের ফলত্বক বিদীর্ণ হয় না, তাদের অবিদারী ফল বলে। অবিদারী ফল চার রকমের হয়, যথা- a. অ্যাকিন (কালোজিরা, ছাগলবটি), b. ক্যারিওপসিস (ধান, গম), c. নাট (কাজুবাদাম, ওক), d. সিপসেলা (সূর্যমুখী, গাঁদা)।

a. অ্যাকিন : এই ধরনের ফল সরল গর্ভপত্রের অধিগর্ভ ও একপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। ফলত্বক খুব পাতলা, ফলের মধ্যে একটি মাত্র বীজ থাকে, ফলত্বক ও বীজত্বক পৃথক থাকে। যেমন—ছাগলবটি, সন্ধ্যামণি, কালোজিরা।

b. ক্যারিওপসিস : এরকম ফল অ্যাকিনের মতোই, তবে ফলের ফলত্বক ও বীজত্বক সংযুক্ত। যেমন- ধান, গম, ভুট্টাদানা ইত্যাদি।

c. নাট : এই ধরনের ফল দুটি অথবা বহুগর্ভপত্রী যুক্ত গর্ভকেশরের অধিগর্ভ ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। ফলত্বক চর্মবৎ অথবা কাষ্ঠল প্রকৃতির হয়। ফলে সাধারণত একটিমাত্র বীজ থাকে। যেমন- কাজুবাদাম, ওক।

d. সিপসেলা : এই ধরনের ফল দুটি গর্ভপত্রযুক্ত গর্ভকেশরের অধোগর্ভ ও একপ্রকোষ্ঠবিশিষ্ট ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। যেমন- সূর্যমুখী, গাঁদা।

iii. ভেদক ফল : যে সব ফলের ত্বক অবিদারী অংশ বহু খণ্ডাংশে বিদীর্ণ হয়, তাদের ভেদক বলে। এই প্রকার ফল বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন-

a. লোমেনটাম : এই ধরনের ফল একগর্ভপত্রী এবং অধিগর্ভ ডিম্বাশয় থেকে সৃষ্টি হয়। পরিণত ফলের ফলত্বক অনুপ্রস্থে কয়েকটি খন্ডে বিদীর্ণ হয় এবং খন্ডগুলি আলাদা ভাবে খসে যায়। প্রতিটি খন্ডে একটি করে বীজ থাকে। উদাহরণ – লজ্জাবতী, বাবলা এই রকমের ফল।

b. ক্ৰিমোকার্প : এই প্রকার ফল যুক্তগর্ভপত্রী, অধোগর্ভ এবং দ্বিপ্রকোষ্ঠ ডিম্বাশয় থেকে সৃষ্টি হয়। পরিণত ফল লম্বালম্বিভাবে দুটি খন্ডে বিদীর্ণ হয়। প্রতিটি প্রকোষ্ঠে একটি করে বীজ থাকে। খন্ড দুটিকে মেরিকার্প।বলে। উদাহরণ – ধনে, মৌরি, মেঠরি ইত্যাদি।

c. কারসেরুল : এই প্রকার ফল যুক্তগর্ভপত্রী অধিগর্ভ এবং চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট ডিম্বাশয় থেকে সৃষ্টি হয়। পরিণত ফল চারটি খন্ডে বিদীর্ণ হয়। প্রতিটি খণ্ডে একটি করে বীজ থাকে। উদাহরণ – তুলসী, রক্তদ্রোণ ইত্যাদি।

d. রেগমা : এই প্রকার ফল যুক্তগর্ভপত্রী, অধিগর্ভ এবং তিন বা পাঁচ প্রকোষ্ঠযুক্ত ডিম্বাশয় থেকে সৃষ্টি হয়। পরিণত ফলে ডিম্বাশয়ের প্রকোষ্ঠ সংখ্যার সমান সংখ্যক খন্ডে বিদীর্ণ হয়। প্রতি খন্ডে একটি করে বীজ থাকে। উদাহরণ – জিরানিয়াম, রেড়ি ইত্যাদি।

e. সামারা : এই প্রকার ফল যুক্তগর্ভপত্রী অধিগর্ভ এবং একাধিক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। এই ফলের ফলত্বক প্রসারিত হয়ে পক্ষের মতো আকার ধারণ করে। প্রতিটি প্রকোষ্ঠে বীজ থাকে। উদাহরণ – খামালু, মাধবীলতা ইত্যাদি।

f. সামারয়েড : এটি একধরনের সামারা জাতীয় ফল, তবে এদের পক্ষগুলি ফলত্বক থেকে উৎপন্ন না হয়ে, স্থায়ী বৃত্তি থেকে সৃষ্টি হয়। উদাহরণ – শাল।

2. রসাল ফল :

এইপ্রকার ফলের ফলত্বক রসাল ও শাঁসালো প্রকৃতির হয়। এইপ্রকার ফল পাঁচ রকমের হয়। যথা- i. ডুপ (আম), ii. বেরি (পেয়ারা, বেগুন), iii. পেপো (শশা, লাউ, কুমড়ো), iv. পোম (আপেল, নাসপাতি), v. হেসপেরিডিয়াম (লেবু)।

i. ড্রপ : এই রকমের ফল একবীজবিশিষ্ট এবং একগর্ভপত্রী অথবা বহুগর্ভপত্রী যুক্ত গর্ভকেশরের ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। এইরকম ফলের ফলত্বকটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- চর্মবৎ বহিস্তক, রসালো মধ্যত্বক এবং কঠিন অস্তস্ত্বক। আম, কুল ইত্যাদি এই প্রকারের ফল। কোনো কোনো ডুপের মধ্যত্বক তন্তুময় হয়। একে তন্তুময় ড্রপ বলে। যথা- নারকেল।

ii. বেরি : এই ধরনের ফল রসালো ও বহুবীজবিশিষ্ট। এই রকম ফল একগর্ভপত্রী বা বহুগর্ভপত্রী যুক্ত গর্ভকেশরের ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। বীজগুলি মাংসল শাঁসের মধ্যে নিহিত থাকে। যেমন- কলা, টম্যাটো, বেগুন ইত্যাদি এই রকমের ফল।

iii. পেপো : এই রকম ফল রসালো ও বহুবীজবিশিষ্ট হয়। এই ফল বহুগর্ভপত্রী যুক্তগর্ভকেশরের অধোগর্ভ ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। এই ফলের বহিস্ত্বক চর্মবৎ বা সামান্য শক্ত হয়। বীজগুলি অমরার সঙ্গে স্তরে স্তরে যুক্ত থাকে। যেমন শশা, কুমড়ো প্রভৃতি।

iv. হেসপেরিডিয়াম : এই প্রকার ফল বহুপ্রকোষ্ঠবিশিষ্ট এবং যুক্তগর্ভপত্রী গর্ভকেশরের অধিগর্ভ ডিম্বাশয় থেকে সৃষ্টি হয়। এইরকম ফলের বহিস্ত্বক ও মধ্যত্বক যুক্ত হয়ে ফলত্বকের খোসা সৃষ্টি হয়। অন্তস্ত্বকটি পাতলা এবং তা থেকে উৎপন্ন রোমগুলি রসালো হয়ে ফলের কোয়া গঠন করে। যেমন- কমলালেবু, বাতাবিলেবু ইত্যাদি।

v. পোম : এটি একরকমের অপ্রকৃত রসালো ফল। এটি যুক্ত গর্ভকেশরের পুষ্পাক্ষ পরিবেষ্টিত অধোগর্ভ ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। এই ফলের রসালো পুষ্পাধারটি ভোজ্য অংশ। নাসপাতি, আপেল এই রকম ফল।

আরও পড়ুন :

ফল কাকে বলে ? ফলের প্রকারভেদ ও গঠন?

1 thought on “সরল ফল কাকে বলে ? সরল ফলের প্রকারভেদ”

Leave a Comment