মূলজ চাপ কাকে বলে – What is Root Pressure : প্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম , এই পর্বটিতে আমরা মূলজ চাপ কাকে বলে এবং মূলজ চাপের বৈশিষ্ট্য ও পরীক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন্য খুবই হেল্পফুল হবে।
মূলজ চাপ :
মূলরোম দ্বারা শোষিত জল কোশান্তর অভিস্রবণের মাধ্যমে বহিঃস্তরের বাইরে থেকে ভিতরের দিকে প্রবেশ করে। বহিঃস্তরের পূর্ণ রসস্ফীত কোশগুলি মৃত জাইলেম বাহিকার মধ্যে যে ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করে জলের উৎস্রোত ঘটায়, তাকে মূলজ চাপ বলে। কোনো গাছে পর্যাপ্ত জল দেওয়ার পর যদি গাছটির কান্ড নীচ থেকে কেটে ফেলা হয় তাহলে দেখা যায় কর্তিত অংশটি থেকে বিন্দু বিন্দু জলকণা নির্গত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মূলজ চাপের ফলেই ওই কর্তিত অংশের জাইলেম বাহিকা থেকে জল নির্গত হয়। কর্তিত কাণ্ডের সঙ্গে একটি T নলের সাহায্যে ম্যানোমিটার সংযুক্ত করে মূলজ চাপের পরিমাণ মাপা যায়। মূলজ চাপের পরিমাণ সর্বাধিক 1―1.5 মেগাপাস্কাল হয়।
মূলজ চাপ কাকে বলে :
জল শোষণের ফলে মূলের কর্টেক্সের অভ্যন্তরে রসস্ফীতিজনিত যে চাপ সৃষ্টি হয় তাকে মূলজ চাপ বা রুট প্রেসার বলে।
মূলজ চাপের বৈশিষ্ট্য :
i. মূলের বহিঃস্তরের কোশগুলির অন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলজ চাপের সৃষ্টি হয় যা জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে জলস্তম্ভকে ওপরের দিকে ঠেলে তোলে। মূলজ চাপের পরিমাণ সচরাচর 0.1-0.5 মেগাপাস্কাল যা জলস্তম্ভকে 10-15 ফুট উঁচুতে তুলতে পারে কিন্তু উঁচু গাছের অগ্রভাগে মূলজ চাপের মাধ্যমে জল পৌঁছানো সম্ভব নয়। দেখা গেছে যে সর্বোচ্চ উদ্ভিদের অগ্রভাগে জল পৌঁছাতে গেলে 2.2 মেগাপাস্কাল বা 22 বায়ুমন্ডলীয় চাপের প্রয়োজন কিন্তু মূলজ চাপের মান এই কাঙ্ক্ষিত চাপের মাত্র 16 শতাংশ।
ii. কনিফার ও অন্যান্য অনেক ব্যক্তবীজী উদ্ভিদে মূলজ চাপ লক্ষ করা যায় না, তা সত্ত্বেও জল ওই সব সুদীর্ঘ উদ্ভিদের অগ্রভাগে উঠতে পারে।
iii. অধিকাংশ উদ্ভিদেই মূলজ চাপের মাধ্যমে জলশোষণের চেয়ে বাষ্পমোচনের হার বেশি হয়। গ্রীষ্মকালে মূলজ চাপের মাত্রার চেয়ে বাষ্পমোচনের হার বেশি হয়; আবার বসন্তকালে বাষ্পমোচনের হারের চেয়ে মূলজ চাপের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।
এই তথ্যগুলি প্রমাণ করে বীরুৎ শ্রেণির উদ্ভিদে জল বা রসের উৎস্রোত মূলজ চাপের সাহায্যে ঘটলেও সুদীর্ঘ গাছের ক্ষেত্রে মূলজ চাপ জলের ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহের একমাত্র কারণ নয়।
মূলজ চাপের পরীক্ষা :
উপকরণ : টবসহ টম্যাটো বা শালগম বা ব্রায়োফাইলাম উদ্ভিদ, ছুরি, রবার টিউব, সরু কাচের নল, রঙিন জল, স্ট্যান্ড, পেট্রিডিস, ক্ল্যাম্প।
পরীক্ষা :
i. কয়েকদিন জল দেওয়া হয়েছে এমন গাছের কাণ্ডটি মাটি থেকে 5-8 সেমি উচ্চতায় কেটে ফেলা হল ।
ii. একটি সরু কাচের নলকে কাটা অংশের সঙ্গে রবার টিউব দিয়ে টাইট করে আটকে দেওয়া হল এবং নলটিকে স্ট্যান্ডের সঙ্গে আটকে উলম্ব ভাবে রাখা হল।
iii. কাচের নলের কিছু অংশ রঙিন জল ঢেলে, জলের শেষ প্রান্ত ‘A’ চিহ্নিত করা হল ।
iv. যেখানে জলের তল শেষ হয়েছে সেই তলে কয়েক ফোঁটা গাঢ় তেল ঢালা হয়।
v. কাচনলের শেষ মুক্ত প্রান্ত একটি পেট্রিডিস দিয়ে ঢাকা দেওয়া হল।
পর্যবেক্ষণ : কয়েক ঘণ্টা পরে রঙিন জলের তলকে ওপরের দিকে উঠে থাকতে দেখা যাবে। সেখানে ‘B’ চিহ্নিত করা হল। মূলজ চাপের জন্য জল কান্ড থেকে কাচ নলে প্রবেশ করেছে ফলে জলের তল ওপরের দিকে উঠে এসেছে।
সিদ্ধান্ত : উদ্ভিদের মূলজ চাপের ফলে জল কান্ড থেকে পাম্প করে কাচ নলে প্রবেশ করেছে ফলে জলের তল ওপরের দিকে উঠে গেছে। এই পরীক্ষাটি থেকে উদ্ভিদের মূলজ চাপের প্রমাণ পাওয়া যায়।