বন্দর কাকে বলে ? What is Port | কলকাতা বন্দরের উন্নতি ও অবনতির কারণ

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

বন্দর কাকে বলে ? কলকাতা বন্দরের উন্নতি ও অবনতির কারণ

বন্দর কাকে বলে ? কলকাতা বন্দরের উন্নতি ও অবনতির কারণ : আজকে আমরা জানবো পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল বন্দর কাকে বলে ? এবং কলকাতা বন্দরের উন্নতি ও অবনতির কারণ সম্পর্কে। চলুন দেখে নিই বন্দর কাকে বলে।

বন্দর কাকে বলে

বন্দর শব্দটি লাতিন শব্দ ‘ Porta ’ থেকে নেওয়া হয়েছে , যার অর্থ প্রবেশদ্বার । এককথায় বন্দর বলতে বোঝায় স্থলভাগ থেকে জলভাগে প্রবেশ ও জলভাগ থেকে স্থলভাগে প্রবেশের স্থান যার মাধ্যমে পণ্য , যাত্রী প্রভৃতি পরিবাহিত হয়।

পশ্চিমবঙ্গের প্রধান প্রধান বন্দর গুলি হল কলকাতা বন্দর ( হুগলি নদীর বামতীরে অবস্থিত ) ও হলদিয়া বন্দর । এই বন্দর দুটি নদীভিত্তিক বন্দর হিসেবে পরিচিত ( ভারতেও )।

কলকাতা বন্দরের গুরুত্ব :

কলকাতা বন্দর হল একটি নদীভিত্তিক বন্দর । বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রায় 130 কিমি অভ্যন্তরে হুগলি নদীর বামতীরে কলকাতা বন্দরটি অবস্থিত । কলকাতা বন্দরের পশ্চাদভূমি অবস্থিত প্রায় 13 লক্ষ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে।

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কলকাতা বন্দরের গুরুত্বগুলি অপরিসীম , যথা—

1. বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ : পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব ও উত্তর – পূর্ব ভারত এবং নেপাল ও ভুটানের অর্থনীতিতে কলকাতা বন্দরের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এই বিশাল পশ্চাদভূমির আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের অধিকাংশই কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে হয়।

2. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : কলকাতা বন্দরের মাধ্যমেই বিদেশে বাণিজ্য সম্পন্ন হয় বলে আমদানি – রপ্তানি থেকে । উদ্ভুত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভবপর হয়েছে।

3. শিল্পে সহায়তা : পশ্চিমবঙ্গের চা , পাটজাত দ্রব্য ও কয়লা , অসমের চা , ওডিশা ও বিহারের আকরিক লোহা , কয়লা , অভ্র প্রভৃতি কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি হয়।

4. কৃষিতে সহায়তা : এই বন্দরের মাধ্যমে বিশাল পশ্চাদভূমির শুধু উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানিই নয় , এখানকার কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সার , কীটনাশক , যন্ত্রপাতি প্রভৃতি আমদানিও করা হয় । তাই বলা যায় , এই অঞ্চলের কৃষির উন্নতিতে কলকাতা বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম।

5. কর্মসংস্থান : এই অঞ্চলের কৃষিকাজ , শিল্পকর্ম , ব্যাবসা বাণিজ্য প্রভৃতির মাধ্যমে যে লক্ষলক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয় তাও পরোক্ষভাবে কলকাতা বন্দরের মাধ্যমেই ঘটে । এ ছাড়া বন্দরে নিয়োজিত শ্রমিকের কর্মসংস্থানও ঘটে।

6. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : প্রধানত বন্দরকে কেন্দ্র করে ( আমদানি – রপ্তানির সুবিধার জন্য ) পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র পূর্ব ভারতে সড়ক , রেল ও জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে।

7. খাদ্যদ্রব্য আমদানি : পশ্চিমবঙ্গ খাদ্যশস্য উৎপাদনে সম্পূর্ণভাবে আত্মনির্ভর নয় । তাই খাদ্যদ্রব্য আমদানি করার জন্য কলকাতা বন্দরের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় । তাই বলা যায় , পশ্চিমবঙ্গের প্রধান প্রধান বন্দর হিসেবে কলকাতা বন্দরের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য।

কলকাতা বন্দরের উন্নতির কারণ :

1. শিল্পজাত কাঁচামালের আমদানি : ঊনবিংশ শতকে , ইংরেজদের আমলে কলকাতা বন্দর গড়ে ওঠে । ইংল্যান্ড থেকে সামরিক সাজসরঞ্জাম ও শিল্পজাত পণ্যদ্রব্য ভারতে আনার জন্য তাঁরা হুগলি নদীর তীরে কলকাতা বন্দর গঠন করেন।

2. ভাগীরথী – হুগলি নদীর নাব্যতা : ভাগীরথী – হুগলি নদীর জলের নাব্যতা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় সমুদ্রগামী জাহাজসমূহ স্বচ্ছন্দেই এই হুগলি নদীপথে চলাচল করতে পারে।

3. সম্পদে পরিপূর্ণ পশ্চাভূমি : পূর্ব ভারতের এক সুবিশাল এলাকা নিয়ে কলকাতা বন্দরের পশ্চাদভূমি গঠিত হয়েছে । এই অঞ্চলটি কৃষিজ ( চা , পাট , ধান আকরিক , অভ্র প্রভৃতি ) , ( ইঞ্জিনিয়ারিং , সিমেন্ট , কাগজ প্রভৃতি শিল্প থাকায় অঞ্চলটি যথেষ্ট জনবহুল।

4. জনবহুল মহানগরী : কলকাতা অত্যন্ত জনবহুল মহানগরী হওয়ায় এখানকার বন্দরের কাজের জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায়।

5. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা : ভাগীরথী – হুগলি নদীপথ , দক্ষিণ – পূর্ব রেলপথ এবং কয়েকটি জাতীয় রাজপথের ( 2 নং , 6 নং , 34 নং জাতীয় সড়ক ) মাধ্যমে কলকাতার সঙ্গে সমগ্র পূর্ব ভারতের যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে , সেটিও কলকাতা বন্দরের উন্নতিতে সহায়তা করে।

6. অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ : কলকাতা এবং এর সংলগ্ন এলাকার অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ , যেমন — সমতল ভূমিরূপ , সমভাবাপন্ন জলবায়ু প্রভৃতি কলকাতা বন্দরের উন্নতির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

7. বাণিজ্যকেন্দ্রের অবস্থান : পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা পূর্ব ভারতের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ও শিল্পকেন্দ্র হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে কলকাতা বন্দরের উন্নতি ঘটেছে।

কলকাতা বন্দরের অবনতির কারণ :

পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা বন্দরের অধিক গুরুত্ব থাকলেও বর্তমানে সেই গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি নিম্নরূপ-

1. নদীর নাব্যতা হ্রাস : নিয়মিতভাবে প্রচুর পরিমাণে পলি , বালি প্রভৃতি নদীবক্ষে সঞ্চিত হওয়ার ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে । ফলে সমুদ্রগামী জাহাজগুলি কলকাতা বন্দরে আসতে পারছে না।

2. নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথ : নদীর মোহানা থেকে কলকাতা বন্দর পর্যন্ত হুগলি নদীতে অসংখ্য বাঁক আছে । এগুলি বড়ো জাহাজ চলাচলে অসুবিধাজনক।

3. নদীতে বড়ো – বড়ো বালুচরের অবস্থান : মোহানা থেকে কলকাতা বন্দর পর্যন্ত হুগলি নদীতে প্রায় 14-15 টি বড়ো বালুচর আছে । এজন্য বিদেশি জাহাজগুলি পথপ্রদর্শক জাহাজ ছাড়া কলকাতা বন্দরে আসতে পারে না।

4. বন্দরের স্থানাভাব : বন্দরের স্থানাভাবের জন্য একসঙ্গে অনেকগুলি জাহাজ নোঙর করা যায় না এবং জেটির অভাবে বেশি পরিমাণে মাল বোঝাই ও খালাস করা যায় না।

উপরোক্ত কারণগুলি আলোচনা করে বলা যায় , কলকাতা বন্দরের অবনতির অন্যতম কারণ হল উপরোক্ত কারণগুলির সম্মিলিত প্রয়াস।

আরও পড়ুন :

পশ্চিমবঙ্গ চা শিল্পে উন্নতির কারণ

Leave a Comment