মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে ? মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতি

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে ? মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতি

মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে এবং মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতি গুলি সম্পর্কে।

মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে :

মৃত্তিকার ক্ষয় রোধ করে উর্বরতা শক্তি পুনরুদ্ধার করতে, জমির কার্যকারিতা শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং সর্বোপরি মাটি সম্পদকে মানুষের কল্যাণে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করার জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাকে মৃত্তিকা সংরক্ষণ বলে।

মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতি :

মৃত্তিকা ( মাটি ) সংরক্ষণের ব‍্যবস্থাকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা- 1. কৃষিজ পদ্ধতি ও 2. কারিগরি পদ্ধতি।

কৃষিজ পদ্ধতি :

1. ফসল পুনরাবর্তন : শস্যাবর্তন, আন্তঃকৃষি এবং নানা ধরনের শস্য একই জমিতে চাষের মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা যায়। কারণ এতে কোনও সময়ই জমি উন্মুক্ত থাকে না এবং মৃত্তিকার দৃঢ়তাও বৃদ্ধি পায়। এই জন্য ভারতে বর্ষাকালে একই জমিতে ভুট্টা, মোটর, ছোলা ইত্যাদি শস্যের চাষ হয়।

2. শস্য নির্বাচন : মৃত্তিকা ক্ষয় রোধের জন্য এমন ধরনের শস্য নির্বাচন করা উচিত যেগুলি সর্বাধিক পরিমাণ ভূপৃষ্ঠ আচ্ছাদিত করে রাখতে পারে এবং মৃত্তিকা কণাগুলিকে দৃঢ়ভাবে সংঘবদ্ধ করতে পারে।

3. জৈব পদার্থের সংরক্ষণ : মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণের হ্রাস রোধ করার জন্য শস্যাবর্তন করা হয়। এই ব্যবস্থা একদিকে মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং অন্যদিকে জৈব পদার্থের পরিমাণের বৃদ্ধি ঘটায়। এ ছাড়া, শস্য পেকে যাওয়ার পর গাছের অবশিষ্টাংশ কৃষিক্ষেত্রে রেখে দেওয়া হয়। পাতা, মূল ইত্যাদিও জমিতে ফেলে রাখা হয়। এগুলি মৃত্তিকাকে ঢেকে রেখে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।

4. সমোন্নতি রেখা বরাবর কৃষিকাজ বা ফালি চাষ : পাহাড়ের সুদীর্ঘ লম্বা ঢালে চাদর ক্ষয় ও নালিক্ষয় বেশি হয়। ঢালের আড়াআড়ি বহু সরু সরু ফালি তৈরি করে কার্যকরী ঢালের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিলে ওই দুই প্রকার ক্ষয়ের তীব্রতা হ্রাস পায় । এ ছাড়া প্রত্যেকটা ফালিতে খাদ্যশস্য ও মধ্যবর্তী ঢালু জমিতে খড় বা ঘাস জাতীয় শস্য পর্যায়ক্রমে চাষ করলে জলপ্রবাহ বেশি গতি লাভ করতে পারে না। কারণ দুটি কর্ষিত ফালির মধ্যবর্তী ঘাস জলের প্রবাহকে থামিয়ে দেয়। এভাবে ফালি চাষের দ্বারা মাটির ক্ষয় রোধ করা যায়। যখন সমোন্নতিরেখার সমান্তরালে না করে আড়াআড়ি ফালি তৈরি করা হয় তখন সেই ব্যবস্থাকে সমোন্নতিরেখা ফালি-চাষ বলে।

5. ধাপ গঠন : ঢালু জমিতে বিভিন্ন প্রকার ধাপ গঠন করলে ঢালের গ্রেডিয়েন্ট বা কৌণিক মান ও কার্যকরী দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়। বেঞ্চ ধাপ তৈরি করা হয় যেখানে জলের প্রবাহকে প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। জমিতে বড়ো বড়ো যন্ত্রের ব্যবহার ও পুরো জমি চাষের জন্য কাজে লাগাতে কৃষকেরা সাধারণত প্রশস্ত ভিতের ধাপ গঠন করে। এ ধরনের ধাপযুক্ত জমিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে মাটি প্রায় ক্ষয়ই হয় না।

6. প্রচলিত কৃষি পদ্ধতিতে চাষ আবাদের পরিবর্তে সংরক্ষিত কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ : প্রচলিত চাষবাসের ক্ষেত্রে প্রথমে লাঙ্গল, ট্রাক্টর চালিয়ে মাটি তৈরি করে বীজ বোনা, চারাগাছ প্রভৃতি লাগানো হয়। এতে মাটির কোনো আচ্ছাদিত অংশ থাকে না। কিন্তু সংরক্ষিত কৃষি পদ্ধতিতে কতকগুলি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাটিকে যথাসম্ভব অকর্ষিত রেখে অর্থাৎ অনেকটা অংশ খড়-কুটো ইত্যাদি জৈব পদার্থ দিয়ে ঢাকা রেখে চারাগাছ লাগানো বা বীজ বোনা হয়। এর ফলে মাটির কণা আলগা হয় না এবং অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।

কারিগরি পদ্ধতি :

1. কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ : মৃত্তিকা ক্ষয় রোধের উদ্দেশ্যে ঢালের সমান্তরালে বিভিন্ন উচ্চতায় বাঁধ নির্মাণ করা হয় এবং দুটি বাঁধের মধ্যবর্তী অংশে কৃষিকাজ করা হয়।

2. বৃক্ষরোপণ : খাত অন্তর্বর্তী জমিগুলিতে ঝোপ, বৃক্ষ ইত্যাদি রোপণ করলে মৃত্তিকাক্ষয় হ্রাস পাবে। আবার মাটির বাঁধগুলির ওপর ঝোপঝাড় ও বৃক্ষরোপণ করা হয়ে থাকে।

3. খাতের তদারকি বা ব্যবস্থাপনা : খাত বরাবর জলপ্রবাহ কমানোর জন্য খাতগুলির মধ্যে পর পর কতকগুলি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। একে বলা হয় চেক বাঁধ, খাতগুলি ছোটো হলে ঢালের প্রকৃতি অনুযায়ী 4-9 মিটার অন্তর প্রায় 0.5 মিটার উচ্চতাযুক্ত চেক বাঁধ তৈরি করা হয়। এই বাঁধগুলির পশ্চাতে পলি সঞ্চিত হলে খাতের ঢাল কমে যায়। খাত বরাবর জলপ্রবাহের গতিবেগ হ্রাস পেতে থাকে।

4. শেল্টার বেল্ট : বিভিন্ন প্রকার গাছ সমান্তরালভাবে রোপণ করলে অতি শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহের গতিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যা ভূমির উপরিভাগের মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ রোধ করে। মরুভূমি ও মরূদ্যান অঞ্চলে এভাবে মাটির ক্ষয় রোধ করা হয়।

5. অগভীর নালা কাটা : বাতাসের কার্যকরী শক্তি যেখানে বেশি সেইসব অঞ্চলে ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকা ক্ষয় কমাতে হলে বাতাসের গতির আড়াআড়িভাবে জমিতে নালা কেটে রাখলে ভূমিক্ষয় যেমন রোধ করা সম্ভব তেমনই বাতাস দ্বারা বাহিত মৃত্তিকা নালায় পরে নালা ভরাট করে দেয়।

6. জৈবপ্রযুক্তি কৌশল গ্রহণ : অতি খরস্রোত খাতগুলির জলের গতিবেগ রোধ ও ঢালের স্থায়িত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে জৈবপ্রযুক্তি কৌশল গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিকভাবে পচনযোগ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়। গাছের টাটকা ডালকে আংশিক মাটি মাখিয়ে শক্ত আটি বা বাণ্ডিল করে খাতের মধ্যে লম্বা খুঁটি পুঁতে শুইয়ে রাখা হয়। এতে মাটি সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষিত হয় এবং পরবর্তীকালে ডালপালা থেকে গভীর শিকড় বিশিষ্ট উদ্ভিদ জন্ম নিয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করবে।

আরও পড়ুন :

মৃত্তিকা ক্ষয় কাকে বলে ? জলের মাধ‍্যমে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পদ্ধতি

Leave a Comment