ডেভিড হেয়ার সম্পর্কে কী জান ? বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ারের ভূমিকা

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

ডেভিড হেয়ার সম্পর্কে কী জান ? বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ারের ভূমিকা

সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে আমরা ডেভিড-হেয়ার সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করলাম। চলুন দেখে নেওয়া যাক আজকের বিস্তারিত আলোচনাটি।

ডেভিড হেয়ার সম্পর্কে কী জান :

মহামতি ডেভিড হেয়ার ( 1775-1842 খ্রি.) ছিলেন উনিশ শতকের একজন ভারতপ্রেমিক মানবতাবাদী ।

প্রথম জীবন : ডেভিড হেয়ার 1775 খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি 1800 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে ঘড়ির ব্যাবসা শুরু করেন এবং প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। ঔপনিবেশিক শাসনে এদেশের মানুষের দুর্দশা দেখে তিনি ব্যথিত হন।

আধুনিক শিক্ষার প্রসার : ডেভিড হেয়ার উপলব্ধি করেন যে , এদেশের মানুষের সার্বিক অগ্রগতির জন্য আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো অত্যন্ত জরুরি । এই উদ্দেশ্যে তিনি হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠায় (1817 খ্রি.) সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যপুস্তক রচনার উদ্দেশ্যে ওই বছর স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

নারীশিক্ষার অগ্রগতি : ডেভিড-হেয়ার এদেশের মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে কয়েকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং নারীশিক্ষার পক্ষে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।

শোষণের বিরোধিতা : ডেভিড-হেয়ার দরিদ্র ভারতীয়দের ওপর ঔপনিবেশিক শোষণের বিরোধিতা করেন । নিষ্ঠুর শ্রম আইনের দ্বারা দরিদ্র ভারতীয় শ্রমিকদের দাস হিসেবে ইউরোপে রপ্তানি , সংবাদপত্রের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ ইত্যাদির বিরুদ্ধে তিনি প্রচার চালান।

দেশাত্মবোধ : বাংলাকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ডেভিড-হেয়ার তাঁর স্বদেশ স্কটল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার চিন্তা ত্যাগ করেন। তিনি বাংলা ভাষায় কথা বলতেন , দেশীয় খাবার খেতেন , দেশীয় পোশাক পরতেন এবং স্থানীয় সামাজিক আচার – অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন।

◆ বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ারের ভূমিকা :

ভূমিকা : উনিশ শতকে ইউরোপের যেসব মানুষ বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন , তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সমাজহিতৈষী ডেভিড হেয়ার ( 1775-1842 খ্রি.)।

1. বিপুল অর্থব্যয় : ডেভিড-হেয়ার প্রথম জীবনে ঘড়ির ব্যাবসায় প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। এই অর্থ ব্যয় করে তিনি ভারতে বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।

2. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা : ডেভিড-হেয়ার কলকাতায় একটি আধুনিক ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা চিন্তা করেন। অবশেষে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার হাইড ইস্ট – এর সমর্থনে 1817 খ্রিস্টাব্দে (20 জানুয়ারি) কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজ প্রতিষ্ঠায় ডেভিড হেয়ারের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।

3. স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা : এদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ডেভিড-হেয়ার বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনার উদ্দেশ্যে স্কুল বুক সোসাইটি (1817 খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন।

4. স্কুল প্রতিষ্ঠা : ডেভিড-হেয়ার 1818 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটি প্রথম পটলডাঙ্গা অ্যাকাডেমি , পরে আরপুলি পাঠশালা এবং আরও পরে কলুটোলা ব্রাঞ স্কুল নামে পরিচিত ছিল। সরকার 1856 খ্রিস্টাব্দে স্কুলটির অনুদানের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং 1862-63 খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ করে হেয়ার স্কুল।

5. নারীশিক্ষা : ডেভিড হেয়ার বাংলার নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মেয়েদের জন্য কলকাতায় বেশ কয়েকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে তিনি নারীশিক্ষার পক্ষে এক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।

6. মেডিকেল কলেজ সংক্রান্ত উদ্যোগ : সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে উনিশ শতকের প্রথম ভাগে স্থানীয় হিন্দু ছাত্ররা কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভরতি হতে চাইত না। ডেভিড হেয়ার অবিরাম প্রচার চালিয়ে এবং স্থানীয় মানুষজনের মনের কুসংস্কার দূর করে ছাত্রদের এই কলেজে ভরতি হতে উৎসাহিত করে।

মূল‍্যায়ন : ধর্মনিরপেক্ষ , যুক্তিবাদী ও স্বাধীন চিন্তার অধিকারী ডেভিড হেয়ারের লক্ষ্য ছিল প্রকৃত মানুষ তৈরি করা। আর এই উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন : 

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের রাজা রামমোহন রায়ের অবদান

Leave a Comment