সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | Class 7th History Fourth Chapter Question Answers

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | Class 7th History Fourth Chapter Question Answers

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর নিয়ে। এই প্রশ্ন উত্তর গুলি তোমাদের পরীক্ষার জন‍্য খুবই সাহায্যকারী হবে।

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর :

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :

1. ‘সুলতান’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তর : আরবি ভাষায় এর অর্থ কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা।

2. মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর লাহোর ও দিল্লি কার অধিকারে থাকে ?

উত্তর : কুতুবউদ্দিন আইবকের অধিকারে থাকে ।

3. দুরবাশ কী ?

উত্তর : সুলতানি আমলে স্বাধীন শাসকের প্রতীক দণ্ড।

4. সুলতান রাজিয়া কোন্ কর তুলে নেন ?

উত্তর : সুলতান রাজিয়া জিজিয়া কর তুলে নেন।

5. কত খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন বলবন সুলতান হন ?

উত্তর : 1266 খ্রিস্টাব্দে।

6. আলাউদ্দিন খলজির দক্ষিণ ভারত অভিযানের নেতৃত্ব কে দেন ?

উত্তর : তাঁর সেনাপতি মালিক কাফুর।

7. কার শাসনকালে জৌনপুর রাজ্য দিল্লি সুলতানের অন্তর্ভুক্ত হয় ?

উত্তর : সুলতান বহলোল লোদির শাসনকালে

8. সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?

উত্তর : খিজির খান।

9. কে, কবে বাংলায় ইলিয়াসশাহি শাসন শুরু করেন ?

উত্তর : 1342 খ্রিস্টাব্দে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলায় এই শাসন শুরু করেন।

10. কার আক্রমণে বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসন শেষ হয় ?

উত্তর : আফগান নেতা শের খানের আক্রমণে।

11. কত খ্রিস্টাব্দে কারা বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর : 1336 খ্রিস্টাব্দে হরিহর ও বুক বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।

12. সঙ্গম রাজবংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন ?

উত্তর : রাজা দ্বিতীয় দেবরায়।

13. তাকাভি কী ?

উত্তর : মহম্মদ বিন তুঘলক দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের সাহায্য করার জন্য তাকাভি নামে ঋণের ব্যবস্থা করেন।

14. কত খ্রিস্টাব্দে ও কাদের মধ্যে পানিপতের প্রথম যুদ্ধ হয় ?

উত্তর : 1526 খ্রিস্টাব্দে বাবর ও ইব্রাহিম লোদির মধ্যে।

15. বাংলার শাসক ইলিয়াস শাহের রাজধানী কোথায় ছিল ?

উত্তর : পাণ্ডুয়া।

16. ইলিয়াস শাহের মৃত্যুর পর কে বাংলার শাসক হন ?

উত্তর : সিকান্দর শাহ।

17. ইলিয়াস শাহি বংশের পতন ঘটাতে কে বাংলার শাসক হন ?

উত্তর : রাজা গণেশ।

18. বাংলার কোন সুলতান জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন ?

উত্তর : সুলতান জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহ বা যদু।

19. আফ্রিকার আবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়ার অধিবাসীদের বাংলার কী বলা হত-?

উত্তর : হাবশি।

20. মহম্মদ গাওয়ান কে ছিলেন ?

উত্তর : বাহমনি শাসক তৃতীয় মহম্মদের মন্ত্রী।

21. মালিক কাফুর কে ছিলেন ?

উত্তর : আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি।

22. বিজয়নগরে সালুভ বংশের প্রতিষ্ঠা কে করেন ?

উত্তর : রাজা নরসিংহ।

23. বাহমন শাহের মৃত্যুর পর কে গুলবর্গার শাসক হন ?

উত্তর : বাহমন শাহের পুত্র মহম্মদ শাহ

24. আরাবিডু বংশের প্রথম ও শেষ উল্লেখযোগ্য শাসক কে ছিলেন ?

উত্তর : প্রথম শাসক ছিলেন তিরুমল ও শেষ উল্লেখযোগ্য রাজা ছিলেন দ্বিতীয় বেঙ্কট।

25. কার রাজত্বকালে গিয়াসউদ্দিন বলবন নামে একজন তুর্কি আমির ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেন ?

উত্তর : ইলতুৎমিশের পুত্র নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে।

26. ইকতাদার কাকে বলা হতো ?

উত্তর : সুলতানরা রাজ্যগুলিকে প্রদেশে ভাগ করে তার নাম দেন ইকতা। এই ইকতার দায়িত্বে যে সামরিক নেতা থাকতেন তাকে ইকতাদার বলা হতো।

27. কোন সুলতান ফরাসি কাব্যের একজন সমঝদার ছিলেন ?

উত্তর : সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ ছিলেন ফরাসি কাব্যের একজন সমঝদার।

28. কোন্ আমলে ও কার নেতৃত্বে বাংলায় ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয় ?

উত্তর : ইলিয়াসশাহি ও হোসেন শাহি আমলে শ্রীচৈতন্যদেবের নেতৃত্বে বাংলায় ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়।

29. বিজয়নগরে কোন্ চারটি রাজবংশ শাসন করেছিল ?

উত্তর : সঙ্গম, সালুভ, তুলুভ ও আরাবিডু নামে চারটি রাজবংশ বিজয়নগরে শাসন করেছিল।

30. কে তুলুভ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর : সালুভ রাজবংশের সেনাপতির ছেলে বীরসিংহ সালুভ বংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে তুলুভ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

31. রাজা কৃষ্ণদেব রায় কোন্ গ্রন্থ লিখেছিলেন ?

উত্তর : রাজা কৃষ্ণদেব রায় তেলেগু ভাষায় ‘আমুক্তমাল্যদ’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

32. কত খ্রিস্টাব্দে কোন্ যুদ্ধে বিজয়নগর পরাজিত হয় ?

উত্তর : 1565 খ্রিস্টাব্দে বানিহাটির যুদ্ধে বিজয়নগর পরাজিত হয়।

33. কোন্ অঞ্চলকে রাইচুর দোয়াব বলা হয় ?

উত্তর : কৃষ্ণা এবং তুঙ্গভদ্রা নদীর অববাহিকা অঞ্চলকে রাইচুর দোয়াব বলা হয়।

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর :

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :

1. আমির ও ওমরাহ কাদের বলা হতো ?

উত্তর : দিল্লির সুলতানির ইতিহাসে শাসনকার্যে নিযুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমির বলা হতো। আমিরগণকে একত্রে বলা হতো ওমরাহ।

2. গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময় দিল্লি সুলতানির প্রধান সমস্যা কী ছিল ?

উত্তর : 1266 খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন বলবন নিজেই সুলতানি হন। সিংহাসনে বসার পর তিনি নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। বলবন এক শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময়ে দিল্লি সুলতানির প্রধান সমস্যা ছিল ভিতরের বিদ্রোহ। আমির ওমরাহরা ক্ষমতালোভী হয়ে ওঠে। তিনি কঠোরভাবে এই বিদ্রোহগুলিকে দমন করেন। তাদের চল্লিশ চক্র ভেঙে দেন। রাজতন্ত্রের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে তিনি দরবারে সিজদা অর্থাৎ সুলতানের সামনে সাষ্টাঙ্গে নতজানু হওয়া ও পাইবস অর্থাৎ সুলতানের পদযুগল চুম্বন করার প্রথা চালু করেছিলেন। এই প্রথাগুলি চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অভিজাতদের থেকে সুলতানের ক্ষমতা যে বেশি তা বোঝানো।

বলবন সুলতান হয়ে তাবরহিন্দ, সুনাম ও সামানা দুর্গ সুরক্ষিত করেন। বিপাশা নদী বরাবর সৈন্য ঘাঁটি বসান। তিনি নিজে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকেন। দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলের দস্যুদের দমন করেন ও মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ করেন।

4. ‘রুমি’ কৌশল কী ?

উত্তর : 1526 খ্রিস্টাব্দে পানিপতের প্রথম যুদ্ধে বাবর তুর্কিদের থেকে শেখা এক ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। একে ‘রুমি’ কৌশল বলে।

3. ইবনবতুতা সম্বন্ধে যা জানো লেখো ?

উত্তর : সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে উত্তর আফ্রিকার মরক্কো দেশ থেকে পর্যটক ইবনবতুতা এদেশে এসেছিলেন। তাঁর লেখা ভ্রমণ বিবরণীর নাম কিতাব-উর-রিহলা। এই গ্রন্থটি মহম্মদ বিন তুঘলকের যুগ সম্পর্কে জানার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

4. ইলতুৎমিশ কীভাবে মোঙ্গল আক্রমণ থেকে ভারতকে রক্ষা করেন ?

উত্তর :  খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় ঝড়ের গতিতে আক্রমণ চালান। এর ফলে ভারতেও মোঙ্গল আক্রমণের আভাস তৈরি হয়। 1221 খ্রিস্টাব্দ থেকে উত্তর-পশ্চিমে বারবার আক্রমণ ঘটে। ওই আক্রমণের সামনে সিন্ধু নদ ভারতের পশ্চিম সীমান্ত বলে চিহ্নিত হয়। ইলতুৎমিশ সরাসরি মোঙ্গলদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে দিল্লি সুলতানিকে বাঁচিয়ে দেন।

6. জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহ কে ছিলেন ?

উত্তর : সুলতান জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহ বা ‘যদু’ ছিলেন জন্মসূত্রে হিন্দু। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আমলে বাংলার রাজধানী মালদহের হজরত পান্ডুয়া থেকে গৌড়ে চলে আসে।

7. হাবশি কাদের বলা হয় ?

উত্তর : ইলিয়াসশাহি ও হোসেনশাহি শাসনের মাঝে বাংলায় আবিসিনিয় সুলতানরা শাসন করেছিলেন। এরা আফ্রিকার আবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়া থেকে এসেছিলেন। বাংলায় এদের হাবশি বলা হয়।

8. বাহমন শাহ সম্বন্ধে যা জানো লেখো ?

উত্তর : মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে হাসান গঙ্গু 1347 খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন হাসান বাহমন শাহ নাম নিয়ে দাক্ষিণাত্যে বাহমনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গুলবর্গায় রাজধানী স্থাপন করে নাম দেন আহসনাবাদ। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি তাঁর রাজ্যকে গুলবর্গা, বেরার, বিদর ও দৌলতাবাদ নামে চারটি প্রদেশে ভাগ করেন এবং প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।

9. বাহমনি রাজ্যে দেশীয় ও বাইরের অঞ্চল থেকে আসা অভিজাতদের কী বলা হতো ?

উত্তর : বাহমনি রাজ্যে দেশীয় অভিজাতদের বলা হতো দক্ষিণী। এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা দরবারের অভিজাতদের পরদেশি বলা হতো। অর্থাৎ ‘দেশ’ বলতে মানুষ তখন নিজের এলাকাটাকেই বুঝত।

10. মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর তাঁর জয় করা অঞ্চলগুলি কাদের অধিকারে আসে ?

উত্তর : 1206 খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর তাঁর জয় করা অঞ্চলগুলি তাঁর চারজন অনুচরদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। গজনির অধিকার পান তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ। মুলতান ও উছ এর শাসক হয়ে বসেন নাসিরউদ্দিন কুবাচা। বাংলাদেশের শাসক হন বখতিয়ার খলজি এবং লাহোর ও দিল্লির অধিকার থাকে কুতুবউদ্দিন আইবকের হাতে।

11. খিজির খান কীভাবে শাসন চালিয়েছিলেন ?

উত্তর : সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা খিজির খান নিজে কখনো সুলতান উপাধি নেননি। তিনি একদিকে তুর্কো-মোঙ্গল শাসকদের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে তিনি তাঁর পূর্ববর্তী তুঘলক শাসকদের নাম খোদাই করা মুদ্রা তাঁর রাজ্যে চালু রেখেছিলেন। মধ্যযুগের ভারতবর্ষে এইরকম ঘটনা আগে বা পরে কখনো ঘটেনি।

12. লোদি সুলতানরা কীভাবে নিজেদের শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?

উত্তর : লোদি সুলতানদের শাসনকালে দিল্লি সুলতানির আকার অনেকটা ছোটো হয়ে এলেও সুলতানদের ক্ষমতা খানিকটা বেড়েছিল। সুলতান বহলোল লোদি আফগানদের সাবেকি রীতি মেনে অন্যান্য আফগান সর্দারদের সঙ্গে আসন ভাগ করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি লোদিদের ক্ষমতাও প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে পাশের রাজ্য জৌনপুর তিনি দখল করে নেন। পরবর্তী শাসক সিকান্দার লোদি অন্যান্য আফগান সর্দারদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি আফগান সর্দারদের জানান যে, তারা একান্তভাবেই সুলতানের নিয়ন্ত্রণের অধীন। তাদের ভালোমন্দ সুলতানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করত। এইভাবে সিকান্দার শাহ আফগান সর্দার ও সাধারণ জনগণ উভয়ের ওপরেই তিনি নিজের সার্বভৌমিকতা প্রতিষ্ঠা করেন।

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর :

সংক্ষেপে (৩০-৫০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :

1. দিল্লির সুলতানদের কখন খলিফাদের অনুমোদন দরকার হতো ?

উত্তর :  ইসলাম ধর্ম অনুসারে প্রধান শাসক একজনই তা হলেন খলিফা। ইসলামের আওতায় যত অঞ্চল ছিল, তার মূল শাসক খলিফা। তিনি মুসলমানদের ধর্মগুরুও বটে। ফলে, দিল্লির সুলতানির উপরেও খলিফারই অধিকার ছিল। যেহেতু মুসলিম সম্প্রদায় এক বিশাল অঞ্চল শাসন করতেন, একজন খলিফার পক্ষে সমস্ত অঞ্চল শাসন করা সম্ভব ছিল না। তাই খলিফার অনুমোদন নিয়ে নানান অঞ্চলে নানান ব্যক্তি শাসন করতেন । ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকগণ সুলতান নামে পরিচিত ছিলেন। এমনিতে সুলতানরা খলিফাকে যে খুব মেনে চলতেন তা নয়, তবে মাঝেমধ্যেই কে সুলতান হবে, এই নিয়ে গোলমাল লেগে যেত। তখন কে প্রকৃত সুলতান হবেন তা নিয়ে খলিফার অনুমোদন দরকার হত। খলিফার অনুমোদনের একটা সম্মান ছিল, তা রাকিরা নাকচ করতে পারতেন না।

2. সুলতান ইলতুৎমিশের সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা কী ছিল ?

উত্তর : ইলতুৎমিশ যখন দিল্লির সুলতান হন তখন তাঁর সামনে তিনটি সমস্যা দেখা দেয়। এগুলি হল ঃ (১) সাম্রাজ্যের মধ্যে যারা তাঁকে মানতে চাইছিলেন না অর্থাৎ বিদ্রোহী শক্তিগুলোকে কীভাবে তিনি দমন করতে পারবেন। (২) সেই সময় মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ মোঙ্গল শক্তি ছিল একটা বড়ো আতঙ্ক, সব দেশের সব রাজশক্তির কাছেই। তিনি কীভাবে এই মোঙ্গল শক্তিকে মোকাবিলা করবেন, তা ছিল ইলতুৎমিশের কাছে একটা বড়ো সমস্যা। (৩) কীভাবে সুলতানিতে একটা রাজবংশ তৈরি করা যাবে, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী গোলমাল ছাড়াই সিংহাসনে বসতে পারবেন।

3. কারা ছিল সুলতান রাজিয়ার সমর্থক ? কারা ছিল তাঁর বিরোধী ?

উত্তর : ইলতুৎমিশের সার্থক উত্তরাধিকারী ছিলেন সুলতান রাজিয়া। ইলতুৎমিশের সন্তানদের মধ্যে রাজিয়া ছিলেন যোগ্যতম। ইলতুৎমিশের এক ছেলে অল্প কিছুদিনের জন্যে শাসক হলেও শেষ পর্যন্ত রাজিয়াই ইলতুৎমিশের প্রকৃত উত্তরাধিকারী হতে পেরেছিলেন। রাজিয়ার সুলতান হওয়া নিয়ে সমর্থন ছিল সেনাবাহিনী, অভিজাতদের একাংশ ও দিল্লির সাধারণ লোকেদের। তাঁর বিরুদ্ধে ছিলেন ‘তুর্কি’ অভিজাতরা। এছাড়া উলেমা এবং রাজপুত শক্তিও তাঁর শাসনের বিরোধী ছিলেন।

4. আলাউদ্দিন খলজি কীভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন ?

উত্তর : আলাউদ্দিন খলজির সময়ে দিল্লি দুবার মোঙ্গলদের হাতে আক্রান্ত হয়। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি বিরাট এক সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন মোঙ্গলদের প্রতিরোধ করার জন্য। সৈনিকদের থাকবার জন্য সিরি নামে এক নতুন শহর তৈরি করা হয়। সেনাবাহিনীকে রসদ জোগানোর জন্যে দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের ওপর বেশি হারে কর চাপানো হয়। দুর্গনির্মাণ, সৈন্যসংগ্রহ ও মূল্যনিয়ন্ত্রণ করে সফলভাবে আলাউদ্দিন মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন।

5. ইলিয়াসশাহি এবং হোসেন শাহি আমলে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় দাও।

উত্তর : ইলিয়াস শাহি এবং হোসেন শাহির আমলে বাংলার সংস্কৃতির উন্নয়ন হয়েছিল। এই সময়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, স্থাপত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়। হোসেন শাহের আমলে বাংলা লেখালেখির চর্চা বাড়ে। ইলিয়াসশাহি ও হোসেনশাহি সুলতানরা ছিলেন অন্য ধর্মমত বিষয়েও উদার। সুলতানদের ধর্মীয় উদারতা বাংলায় সব ধর্মের মানুষকে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছিল। এই সময়েই বাংলায় শ্রীচৈতন্যের নেতৃত্বে ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়।

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর :

বিশদে (১০০–১২০) টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :

1. মানচিত্র থেকে আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযানের বিবরণ দাও।

উত্তর : আলাউদ্দিন খলজি দিল্লির প্রথম সুলতান যিনি দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান। এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর সেনাপতি মালিক কাফুর। আলাউদ্দিন খলজির সৈন্যদল সেনাপতি মালিক কাফুরের নেতৃত্বে 1305 খ্রিস্টাব্দে মাণ্ডু জয় করে। তারপর 1311 খ্রিস্টাব্দে দেবগিরি অধিকার করে। ওই বছরেই আলাউদ্দিন খলজি ওয়ারঙ্গল জয় করেন। এরপর একে একে হোয়সল ও কাকতীয় দখল করেন। তারপর তাঁর দখলে আসে দ্বারসমুদ্র। এরপর তাঁর সৈন্যদল জয় করে তাঞ্জোর। সবশেষে মাদুরাই এবং পাণ্ড্য জয় করে আলাউদ্দিন তাঁর দাক্ষিণাত্য অভিযান শেষ করেন এবং ভারত মহাসাগরের সীমানা অবধি তাঁর রাজ্য বিস্তৃত হয়।

2. দিল্লির সুলতানদের সঙ্গে তাঁদের অভিজাতদের কেমন সম্বন্ধ ছিল তা লেখো ?

উত্তর : দিল্লির সুলতানদের সাথে তাঁদের অভিজাতদের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। দিল্লির মসনদে বসার জন্যে মুসলিম শাসকদের অভিজাতদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। অভিজাতরা সমর্থন জানালে সিংহাসন দখল করা ছিল সহজ কিন্তু অভিজাতরা যদি বিরুদ্ধে থাকতেন তাহলে শাসনকার্য চালানো সহজ হত না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিংহাসন থেকে বিতাড়িত হতে হত। এভাবেই জনসাধারণ এবং সৈন্যবাহিনীর সমর্থন থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভিজাতদের অসহযোগিতার জন্য সুলতান রাজিয়াকে শুধু সিংহাসন নয়, তাঁকে প্রাণ পর্যন্ত ত্যাগ করতে হয়েছিল।

অনেক সময় দেখা গেছে অভিজাতরা বিদ্রোহ করে আগের সুলতানের বংশধরকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই শাসক হয়ে বসেছে। ত্রয়োদশ শতকের দিল্লি সুলতানিতে এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। যেমন ইলতুৎমিশের পুত্র নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে (1246–66 খ্রি.) গিয়াসউদ্দিন বলবন নামে একজন তুর্কি আমির ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। শেষ অবধি 1266 খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেই সুলতান হন।

3. ইকতা কী? কেন সুলতানরা ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন?.

উত্তর : দিল্লির সুলতান সাম্রাজ্যের সীমানা ক্রমশ বৃদ্ধি করেছিলেন। নতুন অধিকার করা অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায় ও শান্তি বজায় রাখার দরকার ছিল। সুলতানরা যেসব রাজ্য জয় করলেন সেই রাজ্যগুলি এক একটা প্রদেশের মতো ধরে নেওয়া হল। এই প্রদেশগুলিকেই বলা হত ইকতা।

মধ্য এশিয়ার ইসলামীয় সাম্রাজ্যে সামরিক অভিজাতদের ইকতা দেওয়া হত। এই ইকতাগুলি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হত। নবম শতকে এই ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়। রাজকোশে তখন যথেষ্ট পরিমাণে রাজস্ব জমা পড়ছিল না। এদিকে যুদ্ধ করেও তেমন ধনসম্পদ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই সামরিক নেতাদের বেতনের বদলে ইকতা দেওয়া হতে থাকে। একাদশ শতকে সেলজুক তুর্কি সাম্রাজ্যে ইকতা ব্যবস্থার প্রচলন লক্ষ করা যায়। এই সময়ে সাম্রাজ্যের প্রায় অর্ধেক অংশ ইকতা হিসেবে ভাগ করা হয়। কোথাও কোথাও এই ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক হয়ে যায়।

4. আলাউদ্দিন খলজির সময় দিল্লির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তোমার মতামত লেখো ?

উত্তর : রাজকোশের আয় বাড়াতে আলাউদ্দিন খলজি কতকগুলি অর্থনৈতিক সংস্কার করেন। আলাউদ্দিন বাজারের সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঠিক করে দেন। আলাউদ্দিন খলজির আমলে দিল্লিতে চারটি বড়ো বাজার ছিল এইসব বাজারে খাদ্যদ্রব্য, ঘোড়া, কাপড় ইত্যাদি বিক্রি হতো। বাজারদর তদারকির জন্য ‘শাহানা-ই-মাণ্ডি’ ও ‘দেওয়ান-ই-রিয়াস‍’ নামে রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন। সুলতানের ঠিক করে দেওয়া দামের থেকে বেশি দাম নিলে বা ক্রেতাকে ওজনে ঠকালে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

আলাউদ্দিন রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। প্রয়োজনের সময়ে প্রজাদের সুলতানের পক্ষ থেকে খাদ্যশস্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পরিমাণমতো জোগান দেওয়া হত। আলাউদ্দিনের ওই ব্যবস্থা একদমই সঠিক। তৎকালীন যুগে কোনো সুলতানের পক্ষে এই ধরনের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত আশা করা যায় না।

5.বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির মধ্যে সংঘর্ষকে তুমি কী একটি ধর্মীয় লড়াই বলবে ? তোমার যুক্তি দাও ?

উত্তর : আমার মতে বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির মধ্যে সংঘর্ষকে একটি ধর্মীয় লড়াই বলা চলে না। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বিজয়নগর ও বাহমনি রাজ্য দুটি প্রথম থেকেই একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকেই একটানা লড়াই-এর উদ্ভব হয়। প্রধানত রাজনৈতিক সামরিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্যেই এই লড়াই হয়েছিল। এখানে কোনো ধর্মীয় সংঘাত ছিল না। দুই অঞ্চলের শাসকরাই নিজেদের উপাধি নিতেন ‘সুলতান’, যা একটি মুসলিম উপাধি।

দিল্লির সুলতানদের অনেক আদবকায়দা তাঁরা মেনে চলতেন। যদি তাঁরা মুসলিম বিদ্বেষী হতেন তবে তাঁরা তা কখনোই করতেন না। এ ছাড়া বিজয়নগরের শাসকরা নিজেদের বলতেন হিন্দু রাইদের (রাজা) মধ্যে সুলতান। রাজা দ্বিতীয় দেবরায় নিজের বাহিনীর জন্যে তুর্কি যুদ্ধপদ্ধতি আমদানি করেন। তাঁর আমলে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ছিল। এর থেকে বোঝা যায় দুটি শক্তির মধ্যে যে সংঘর্ষ তা নিছক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক, ধর্মের কোনো স্থান সেখানে ছিল না।

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর :

কল্পনা করে লেখো : (১০০ – ১৫০) টি শব্দের মধ্যে :

1. যদি তুমি সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সময়ে দিল্লির একটি বাজারে যেতে তাহলে কেমন অভিজ্ঞতা হতো তা লেখো ?

উত্তর : আমি সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সময়কার লোক হলে কোনো একদিন দিল্লির একটি বাজারে গেলে দেখতে পেতাম বাজারের সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঠিক করে দেওয়া আছে। সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সব দোকানিই একই দামে বিক্রি করছে, কেউ এক পয়সা কম বা বেশি নিচ্ছে না। শুধু তাই নয় আরও চোখে পড়ত ‘শাহানা-ই-মাণ্ডি’ ও ‘দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ’নামে দুই শ্রেণির রাজকর্মচারী সমস্ত বাজার ঘুরে ঘুরে তদারকি করছেন, দোকানিরা সমস্ত জিনিসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া মূল্যেই। যদি কোনোরকম অসাধুতার আশ্রয় নিচ্ছে দেখা যেত তা বিক্রয় করছে কিনা কাউকে তাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় আরও চোখে পড়ত কোনো দোকানি যদি ক্রেতাকে ওজনে ঠকাবার চেষ্টা করছে, তার কঠোর শাস্তি হচ্ছে। বাজারের এই দৃশ্য দেখে সত্যিই ভালো লাগত।

2. মনে করো তুমি আলাউদ্দিন হোসেন শাহের দরবারে একজন রাজকর্মচারী। সে-যুগের ধর্মীয় অবস্থা সম্বন্ধে যদি তুমি একটা বই লিখতে তাহলে তাতে কী লিখতে ?

উত্তর : আমি আলাউদ্দিন হোসেন শাহের দরবারে একজন রাজকর্মচারী। আমার ইচ্ছে হল হোসেন শাহের রাজ্যের ধর্মীয় অবস্থা সম্বন্ধে একটা বই লিখব। তাই লিখতে গিয়ে আমি দেখলাম, হোসেন শাহ রাজ্যে তাঁর উদার ধর্মীয়নীতির জন্যে জনপ্রিয়। তাঁর রাজত্বে হিন্দুদের কোনো ধর্মীয় সংকীর্ণতার জালে আবদ্ধ না রেখে তাদের দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ। হোসেন শাহের উজির, প্রধান চিকিৎসক, তাঁর প্রধান দেহরক্ষী, টাকশালের অধ্যক্ষ সবাই হিন্দু। যা কোনো মুসলিম শাসকের রাজদরবারে অকল্পনীয়। সুলতান নিজে ভদ্র-বিনয়ী, এবং সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল। আমি জানতে পেরেছি সুলতান নিজে শ্রীচৈতন্যের একজন ভক্ত। দেশের সাধারণ মানুষ সুলতানকে কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করে।

তিনি নিজে মুসলিম হলেও বাংলা ভাষা চর্চায় ভীষণ উৎসাহী। সুলতানের এই ধর্মীয় উদারতা সব ধর্মের মানুষকে কাছাকাছি এনেছে। ফলে বর্তমানে বাংলায় কোনো ধর্মীয় বিভেদ নেই। এই কথাই আমি আমার বইতে তুলে ধরবো।

3. মনে করো রাজা দ্বিতীয় দেবরায়ের আমলে পোর্তুগাল থেকে বিজয়নগর বেড়াতে এসেছো। এ দেশের অবস্থা দেখে তুমি নিজের দেশের এক বন্ধুকে চিঠিতে কী লিখবে?-

প্রিয় ফ্রান্সিস,

অনেকদিন হল আমি দেশছাড়া। ভারতে এসে আমি তোমাকে চিঠি লেখার সুযোগ পাইনি। ভারতবর্ষের মধ্যে আমি সবচেয়ে চমৎকৃত হয়েছি বিজয়নগর দেখে। এখানে এসে মনেই হচ্ছে না আমি বিদেশে রয়েছি। ঠিক আমাদের দেশের রোম শহরের মতোই শহরটি বড়ো এবং দেখতে খুবই সুন্দর। নগরটি এবং তার বাড়িগুলি বাগান দিয়ে ঘেরা এবং বাগানের মধ্যে অনেক গাছের কুঞ্জ আছে। শহরের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার জলের অনেকগুলি খাল বয়ে গেছে। মাঝে মাঝে দিঘি আছে এবং রাজপ্রাসাদের কাছে আছে নানা ফলের গাছ।

নগরটিতে প্রচুর লোক জন বাস করে। রাস্তায় ও গলিগুলিতে এত লোক ও হাতি চলাচল করে যে সেই ভীড়ের মধ্যে দিয়ে অশ্বারোহী বা পদাতিক সৈন্য যেতে পারে না। এই শহরের এতো খাওয়া-পরার ব্যবস্থা আমি অন্য কোনো শহরে দেখতে পাইনি। আজ এখানেই শেষ করছি। পরে এই দেশ সম্পর্কে আরও সংবাদ তোমাকে জানাতে চেষ্টা করব।

ইতি তোমার বন্ধু, পল

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর :

রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :

1. সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক সম্বন্ধে যা জানো লেখো ?

উত্তর :  সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক ইসলামের রীতিনীতি ও উলেমার নির্দেশ অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার করে ‘খরাজ’, ‘খামস’, ‘জিজিয়া’ ও ‘জাকাত’–এই চার ধরনের কর নিতেন। ইসলামীয় রীতি অনুযায়ী যে কর নেওয়া যায় সেগুলি ছাড়া অন্যান্য কর তিনি বাতিল করেন। ফিরোজ শাহ তুঘলক একাধিক জনহিতকর কাজ করেন। তিনি অনেক নতুন নগর, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ও বাগান তৈরি করেন। দরিদ্রদের অর্থসাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা ও বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি দপ্তর খোলেন। যেসব জমিতে চাষ হতো না সেগুলির সংস্কার ও কৃষির উন্নতির জন্য তিনি খাল খনন করে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটান।

2. হোসেন শাহ সম্বন্ধে কী জানা যায় ?

উত্তর : মধ্যযুগের বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। তিনি স্বভাবে ছিলেন ভদ্র, বিনয়ী এবং সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল। তিনি সম্ভবত শ্রীচৈতন্যদেবের ভক্ত ছিলেন। প্রসিদ্ধ দুই বৈষ্ণব রূপ ও সনাতনের মধ্যে একজন তাঁর দপ্তরে ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন বলে জানা যায়। সাধারণ মানুষ নাকি হোসেন শাহকে শ্রীকৃষ্ণের অবতার বলে মনে করত। তাঁর শাসনকাল উদারনীতির জন্য বিখ্যাত ছিল। হোসেন শাহের রাজত্বে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ হিন্দুদের দেওয়া হতো। তাঁর শাসনকালে বাংলা ভাষায় লেখালেখির চর্চা খুবই উন্নত হয়।

3. বিদেশি পর্যটকদের বিবরণীতে বিজয়নগর সম্পর্কে কী কী জানা যায় ?

উত্তর : বিজয়নগর সাম্রাজ্যে বহু বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন ইতালির পর্যটক নিকোলো কন্টি, পারস্যের দূত আব্দুর রাজ্জাক। পোর্তুগিজ পর্যটক পেজ ও নুনিজ, দুয়ার্তে করবোসা প্রমুখ। এই পর্যটকরা সকলেই বিজয়নগরের সম্পদ দেখে আশ্চর্য হয়েছিলেন। তাঁদের বর্ণনা থেকে জানা গেছে বিজয়নগর শহরটি সাতটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। জনসাধারণের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি, জলসেচের সুবন্দোবস্ত ছিল। ভূমি রাজস্বই ছিল রাজ্যের প্রধান আয়, কৃষি ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছিল। পোর্তুগিজদের সঙ্গে বিজয়নগরের ঘনিষ্ঠ রাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল।

পর্যটক পেজ তাঁর রচনায় বিজয়নগর সম্পর্কে বলেছেন যে নগরটি রোম শহরের মতোই বড়ো ছিল। স্বচ্ছজলের অনেকগুলি খাল শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ছিল। মাঝে মাঝে ছিল দীঘি, রাজপ্রসাদ প্রভৃতি। এই নগরের লোকসংখ্যা অসংখ্য, এ শহরটির মতো এতো সুন্দর খাওয়া পরার ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্য কোনো শহরে নেই। তবে পর্যটকরা একথাও বলেছেন যে ধনী ও গরিবদের জীবনযাপনের অনেক তফাৎ সেখানে ছিল।

4. আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কারগুলি কী ছিল ?

উত্তর : রাজকোশের আয় বাড়াতে আলাউদ্দিন খলজি কতকগুলি অর্থনৈতিক সংস্কার করেন। পূর্ববর্তী সুলতানদের প্রচলিত ইকতা প্রথা তিনি বাতিল করেন। ধর্মীয় কারণে দেওয়া নিষ্কর জমি ও সম্পত্তি তিনি ফিরিয়ে নেন। সমস্ত জমি জরিপ করিয়ে রাজস্বের হার বাড়ানো হয়। এর পাশাপাশি সুলতান আলাউদ্দিন সুলতানির খরচ কমানোর চেষ্টা চালান। তিনি গঙ্গা-যমুনার মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক অংশ রাজস্ব হিসেবে – আদায় করেন। ভূমি রাজস্ব ছাড়াও গৃহকর, গোচারণভূমি কর, জিজিয়া কর প্রভৃতি কর তিনি আদায় করার নির্দেশ দেন। তাঁর অন্যতম অর্থনৈতিক সংস্কার ছিল বাজারদর নিয়ন্ত্রণ।

আলাউদ্দিন বাজারের সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঠিক করে দেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মুদ্রাস্ফীতি রোধ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনগণকে সস্তায় প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা। এজন্যে তিনি বিভিন্ন রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন। আলাউদ্দিন রেশন ব্যবস্থার প্রচলনও করেন। এইভাবে তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার দ্বারা জনকল্যানমূলক কাজ করেন।

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর :

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ও উত্তর :

শূন্যস্থান পূরণ করো :

(ক) দিল্লিকে কেন্দ্র করে কুতুবউদ্দিন আইবক――― শাসন প্রতিষ্ঠা করলেন।

(খ) ―――ছিলেন কুতুবউদ্দিনেরজামাই।

(গ) ইলতুৎমিশের সন্তানদের মধ্যে ――― ছিলেন যোগ্যতম।

(ঘ) ফিরোজ তুঘলক――― নেতা হিসাবে তত দক্ষ ছিলেন না।

(ঙ) হোসেন শাহের সময় বাংলায়――― এর নেতৃত্বে ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়।

(চ) বিজয়নগর শহরটি ――― প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল।

(ছ) মহম্মদ বিন তুঘলক দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপন করে নাম দেন ―――।

(জ) ফিরোজ তুঘলক পাণ্ডুয়া আক্রমণ করায় ইলিয়াস শাহ――― দুর্গে আশ্রয় নেন।

উত্তর : (ক) সুলতানি। (খ) ইলতুৎমিশ। (গ) রাজিয়া। (ঘ) সামরিক। (ঙ) শ্রীচৈতন্য। (চ) সাতটি। (ছ) দৌলতাবাদ। একডালা।

আরও পড়ুন :

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর