জমিদার সভা সম্পর্কে আলোচনা করো

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

জমিদার সভা সম্পর্কে আলোচনা করো

সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম জমিদার সভা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ‍্য। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।

জমিদার সভা :

ভূমিকা : উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এজন্য ড. অনিল শীল এই যুগকে ‘ রাজনৈতিক সভাসমিতির যুগ ‘ বলে অভিহিত করেছেন। এই সময় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠনগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল জমিদার সভা। এটিই ছিল ভারতের প্রথম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক সংগঠন।

1. প্রতিষ্ঠা : 1838 খ্রিস্টাব্দে (19 শে মার্চ) দ্বারকানাথ ঠাকুরের উদ্যোগে এবং রাজা রাধাকান্ত দেবের সভাপতিত্বে কলকাতায় জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার সভা প্রতিষ্ঠার পর ‘ ভূমিমালিক সমিতি ’ নামে এটি অধিক পরিচিতি লাভ করে।

2. সদস্য : জমিদার সভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন জমিদার এবং ধনী ব্যবসায়ীরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর, রাজা রাধকান্ত দেব, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, রাজকমল সেন, ভবানীচরণ মিত্র প্রভৃতি বড়ো বড়ো ভূস্বামী। বাংলার ব্যাবসাবাণিজ্যে নিযুক্ত বেসরকারি ব্রিটিশরাও জমিদার- সভার সদস্য হতে পারত। তবে সাধারণ মানুষ জমিদার সভার সদস্য হওয়ার বিশেষ সুযোগ পেত না।

3. উদ্দেশ্য : জমিদার- সভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করা। এই উদ্দেশ্যে সভার সদস্যরা কলকাতার ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা চালায় । তারা লন্ডনের ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং সোসাইটির সভাপতি জর্জ থম্পসনকে লন্ডনে ভূমিমালিক সমিতির প্রতিনিধি নিয়োগ করে ।

4. কর্মসূচি : জমিদার- সভা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে-

i. জমিদারদের স্বার্থরক্ষার জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানায়।
ii. তারা ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করে।
iii. তারা ভারতের সর্বত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রসার ঘটানোর দাবি জানায়।
iv. তারা নিষ্কর জমি ভোগদখলের অধিকার পুনঃপ্রবর্তন বন্ধ করার চেষ্টা চালায়।
v. শাসনসংস্কারের জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানায় । vi. তারা সরকারের কাছে পুলিশবিভাগ , বিচারবিভাগ ও রাজস্ববিভাগের সংস্কারের দাবি জানায়।

পড়ুন : ভারত সভা 

5. অবদান : জমিদার- সভা ভারতে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারার সূচনা করে। এই সভার আবেদনে সরকার 10 বিঘা পর্যন্ত ব্রহ্মোত্তর জমির খাজনা মকুব করে। ড . রাজেন্দ্রলাল মিত্র মনে করেন যে , জমিদার সভাই ছিল ভারতের স্বাধীনতার অগ্রদূত।

6. বিলুপ্তি : বাংলার বাইরে জমিদার সভা তাদের প্রভাব বিস্তারে সফল হয়নি । তা ছাড়া 1842 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জমিদার- সভা ক্রমে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তবে 1850 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর অস্তিত্ব কোনোরকমে টিকে ছিল। পরবর্তীকালে এর স্থান দখল করে নেয় বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি।

মূল‍্যায়ন : জমিদার- সভা ছিল একান্তভাবেই জমিদার ও বানিয়াদের একটি সংগঠন। এর সদস্যরা এর আভিজাত্য রক্ষায় সর্বদা যত্নবান থাকতেন। ব্রিটিশরাজের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনেও তারা সচেষ্ট থাকতেন। তবে এই সংগঠন ভারতে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই সংগঠনের অনুকরণে পরবর্তীকালে ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। ফলে এদেশে ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন : 

ফরাজি আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি

ওয়াহাবি আন্দোলনের কারণ, বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি ও গুরুত্ব

1 thought on “জমিদার সভা সম্পর্কে আলোচনা করো”

Leave a Comment