ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।-“কে কোন বিষয়কে পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলে উল্লেখ করেছে ? তার এরকম বলার কারণ কী ?

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।-"কে কোন বিষয়কে পাশবিক স্বার্থপরতা' বলে উল্লেখ করেছে ? তার এরকম বলার কারণ কী ?

সুপ্রির বন্ধুরা আজকের এই পর্বটিতে ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পের- ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।-“কে কোন বিষয়কে পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলে উল্লেখ করেছে ? তার এরকম বলার কারণ কী ? প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল। চলুন দেখে নেওয়া যাক উত্তরটি।

ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।-“কে কোন বিষয়কে পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলে উল্লেখ করেছে ? তার এরকম বলার কারণ কী :

মানিক বন্ধ‍্যোপাধ‍্যায় তাঁর ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে মধ‍্যবিত্ত চাকুরিজীবী মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রের পরিবর্তন দেখিয়েছেন। অনাহারে মৃত্যু দর্শনের পর মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক পরিবর্তন ঘটেছে, সে চাকরি এবং সংসারকে উপেক্ষা করে নিরন্ন মানুষের সেবাই মগ্ন হতে চেয়েছে। সহকর্মী বন্ধু নিখিল তাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেও সে নিজের ভাবনা থেকে সরে আসেনি। নিখিল বলেছে, সে যা করতে চায়, তা নীতি-ধর্মের দিক থেকে সঠিক হলেও সমাজধর্মের দিক থেকে নয়। “সমাজধর্মের দিক থেকে বিচার করলে দশজনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়ো পাপ।”-নিখিলের বলা এই মন্তব্যকে মৃত্যুঞ্জয় উক্তিটি করেছে।

গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনের যে ট্র্যাজেডি, তা কোনো কাহিনি বা ঘটনায় নয়; চরিত্রের মানবতাবাদী ভাবনার অনাবিল লালনে সীমায়িত। তার মানবতাবাদী ভাবনার একটি বড়ো দিক, সে যুক্তিবাদী হলেও আদর্শবাদ ও সংবেদনশীলতা তার মধ্যে প্রধান। তার যুক্তি এতটাই দরদপূর্ণ ও জোরালো যে, তা তার পরিবার-পরিজনদের কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় মনে করেছে সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য পারিবারিক দায়ও বিসর্জন দিতে সে সক্ষম। শুধু দেশের শত শত নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের বাঁচানোই তার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। তাই সহকর্মী নিখিলের যুক্তিকে সহজেই অতিক্রম করে “দশজনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়ো পাপ”-এর প্রত্যুত্তর বলেছে-“ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।”

দ্বিতীয় উত্তর : 

ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।-“কে কোন বিষয়কে পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলে উল্লেখ করেছে ? তার এরকম বলার কারণ কী :

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্প থেকে সংকলিত এই উক্তিটির বক্তা হল মৃত্যুঞ্জয়।

পঞ্চাশের মন্বন্তরকালে হঠাৎই একদিন ফুটপাথে অনাহার-মৃত্যু দৃশ‍্য দেখে মৃত্যুঞ্জয় অপরাধবোধে দীর্ণ হয়ে পড়ে। তার প্রিয় বন্ধু নিখিলের এতে মন খারাপ হয়। তবুও সে ভাবে যে, সব মানুষের সকল সহানুভূতি একত্রিত করে – অনাহারীদের খিদের আগুনে ঢাললেও তা নিভবে না, উলটে তা ইন্ধনই পাবে। তার মতে, ভিক্ষাদানের মতো পাপকর্ম সাধারণ মানুষের কাছে সৎকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয় বলেই মানুষের অন্নের দাবি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। এরপর মাইনের দিন মৃত্যুঞ্জয় যখন তার মাইনের সব টাকা নিখিলের মাধ্যমে ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়, তখন আর নিখিল স্থির থাকতে পারে না। পরিবারের প্রতি মৃত্যুঞ্জয়ের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে সে মৃত্যুঞ্জয়কে জানায় যে, মন্বন্তরকালে ভূরিভোজ অন্যায় হলেও উপোস করে মৃত্যুবরণ করাও একেবারেই উচিত নয়। তাই বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু খাদ্যের দরকার হয়, ততটুকুই সে গ্রহণ করে। নিখিল আরও বলে যে, যতদিন অবধি আত্মরক্ষার উপযোগী ন্যূনতম খাদ্য সে জোগাড় করতে পারবে, ততদিন অবধি সে সেই খাদ্য গ্রহণ করবে। দেশের সমস্ত লোক মরে গেলেও সে অন্যকে সেই আত্মরক্ষার উপযোগী খাবার দিতে পারবে না।

সমাজধর্মের দিক থেকেই বলা যায় যে, দশজনকে হত্যা করার চেয়ে নিজে উপােস করে মৃত্যুবরণ করা আরও বেশি অপরাধ। নিখিলের এই কাজকেই মৃত্যুঞ্জয় ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলে অভিহিত করেছে।

আরও দেখুন :

কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পে মৃত‍্যুঞ্জয়ের চরিত্র 

কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের নামকরণের স্বার্থকতা

Leave a Comment