কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ কোরিয়া যুদ্ধের কারণকোরিয়া যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে।

কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল :

মাও – সে – তুঙ এর নেতৃত্বে চিনে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠত হওয়ার 9 মাস পরে কোরিয়ার যুদ্ধ শুরু হয় 1950 সালে, 25 জুন। আসলে 1945 সালে কোরিয়াবাসীর অনুমতি ছাড়াই কোরিয়াকে উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। কোরিয়া সংকট বা কোরিয়া যুদ্ধ ঠান্ডা লড়াই আবহাওয়াকে আরও তীব্রতর করে তোলে।

কোরিয়া যুদ্ধের বর্ণনা :

1. সংকটের সূচনা :

কোরিয়া 1910 সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত জাপানের কর্তৃত্বাধীন ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে মার্কিন সেনা ও সোভিয়েত লালফৌজ জাপানের হাত থেকে কোরিয়াকে মুক্ত করে। অবশেষে জাপান সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হলে 1945 সালে আগস্ট মাসে 38 ° অক্ষরেখা বরাবর কোরিয়ার উত্তরাংশে রাশিয়ার ও দক্ষিণাংশে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

2 সমস্যা সমাধানে কমিশন গঠন :

1945 সালে ডিসেম্বর মাসে মস্কোয় রাশিয়া – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিলিত হয়ে এক ‘ যুগ্ম কমিশন ‘ গঠন করে । এই কমিশন কোরিয়ার অস্থায়ী স্বাধীন সরকার গঠন করবে বলে ঘোষণা করা হয় । কিন্তু আদর্শগত মতানৈক্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্র তখন বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘে উত্থাপন করলে সমস্যা সমাধানের জন্য সাধারণ সভা 9 টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে একটি অস্থায়ী কমিশন ( United Nations Temporary Commission on Korea বা UNTCOK ) গঠন করে 1947 সালে। এই কমিশনের ওপর কোরিয়া থেকে বিদেশি সেনা অপসারণ এবং শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পিত হয়।

3. উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন :

দক্ষিণ কোরিয়াকে কেন্দ্র করে সুদূরপ্রাচ্যে যখন একটি মার্কিন ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে , তখন কোরিয়া সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলেন উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট নেতা কিম ইল সুং। সোভিয়েত মদতে তিনি সেখানে গণতান্ত্রিক কোরিয়া  নামে একটি সরকার গঠন করেন। পানমুনজম হয় এর রাজধানী । এই সরকারের সেনাবাহিনী কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ 1950 সালের 25 জুন 38 ° অক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণে প্রবেশ করলে দু – পক্ষের মধ্যে শুরু হয় প্রত্যক্ষ লড়াই।

4. দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকার প্রতিষ্ঠা :

রাষ্ট্রসংঘের অস্থায়ী কমিশনের সদস্যদের রাশিয়া উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। রাষ্ট্রসংঘ তখন নিজ তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি নির্বাচনের আয়োজন করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর 15 আগস্ট প্রজাতান্ত্রিক কোরিয়া নামে সেখানে মার্কিন – প্রভাবিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় , সিওল হয় এর রাজধানী । এই সরকারকেই রাষ্ট্রসংঘ সমগ্র কোরিয়ার একমাত্র বৈধ সরকার বলে স্বীকৃতি জানায়।

5. আন্তর্জাতিক সেনা প্রেরণ :

নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে চিহ্নিত করে এবং কোরিয়ায় রাষ্ট্রসংঘের সেনাবাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

কোরিয়া যুদ্ধের কারণ :

কোরিয়া যুদ্ধের কারণ গুলি হল :

2. কোরিয়ায় দুই সরকার গঠন :

অস্থায়ী কমিশনের উদ্যোগ ব্যর্থ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়ার সমস্যাকে জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় উত্থাপন করে। সাধারণ সভা তার 9 টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে একটি অস্থায়ী কমিশন ( United Nations Temporary Commission on Korea বা UNTCOK ) গঠন করে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্তি হন বিশিষ্ট ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে . পি . এস . মেনন। এই কমিশনের ওপর কোরিয়ায় জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া হয় । কিন্তু রাশিয়া জাতিপুঞ্জের সদস্যদের উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করতে দেয়নি । তাই জাতিপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে এক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয় । মার্কিন প্রভাবিত এই সরকারের প্রধান হন সিংম্যান রি।

2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় :

1910 সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত কোরিয়ার ওপর জাপানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল । কিন্তু কায়রো সম্মেলন এবং পটসডাম সম্মেলনে কোরিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা গ্ৰহন করা হয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে এই পরিকল্পনা রূপায়ণের উদ্যোগ শুরু হয়।

3. অস্থায়ী কমিশনের ব্যর্থতা :

কোরিয়ার সমস্যা নিয়ে মস্কোতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় 1945 সালে ডিসেম্বর মাসে। এই বৈঠকে উভয় রাষ্ট্র এক যুগ্ম কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই কমিশনের নেতৃত্বে কোরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ – আলোচনার মাধ্যমে এক অস্থায়ী স্বাধীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । কিন্তু এই উদ্যোগ শেষপর্যন্ত সফল হয়নি।

4. রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়। ফলে জাপান অধিকৃত কোরিয়ার উত্তরাংশ রাশিয়ার কাছে এবং দক্ষিণাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এসময় থেকে কোরিয়ার 38 ° উত্তর অক্ষরেখার উত্তরাংশে রাশিয়া এবং 38 ° উত্তর অক্ষরেখার দক্ষিণাংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠা করে।

কোরিয়া যুদ্ধের ফলাফল :

কোরিয়া যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল গুলি হল-

1. আমেরিকার সামরিক শক্তিবৃদ্ধির প্রস্তুতি :

যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের সুযোগে চিনকে দুর্বল করতে চাইলেও তা সফল হয়নি। তাই তখন থেকে সে তার সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেয়।

2. বিভাজন স্বীকার :

বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দুই কোরিয়ার সংযুক্তি তো দূরের কথা , উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিভাজনকেই মেনে নিতে হয়।

3. মানবিক ও আর্থিক ক্ষতিসাধন :

এই যুদ্ধে দুই কোরিয়ারই প্রচণ্ডভাবছ ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়। মার্কিনি , কোরীয় , চিনা সব মিলিয়ে 25 লক্ষেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

4. ঠান্ডা লড়াইয়ের বিস্তার :

এই যুদ্ধের ফলে ঠান্ডা লড়াই সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে।

সর্বপরি কোরিয়ার যুদ্ধ প্রকৃত অর্থে ছিল অনাবশ্যক ও নিষ্ফল , কেননা দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধের ফল ছিল শূন্য। ঐতিহাসিক ডি . এফ . ফ্লেমিং তাঁর ‘ দ্য কোল্ড ওয়ার অ্যান্ড ইট্স অরিজিন ’ গ্রন্থে লিখেছেন- মার্কিন নাগরিকদের কাছে কোরিয়ার যুদ্ধের নিট ফল অত্যন্ত নেতিবাচক ছিল।

আরও পড়ুন : 

বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

2 thoughts on “কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল”

Leave a Comment