পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার নাম ও তাদের বর্ণনা | Names of 23 districts of West Bengal and their description

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার নাম ও তাদের বর্ণনা | Names of 23 districts of West Bengal and their description

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি পূর্ব ভারতের হিমালয় ও বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হল কলকাতাবর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলা রয়েছে। আয়তনের বিচারে পশ্চিমবঙ্গের বড় জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা। আজকে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার নাম এবং জেলাগুলির সম্পূর্ণ বর্ণনা দেবো।

পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র :

পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র

পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার নাম ও তাদের বর্ণনা :

1. দক্ষিণ 24 পরগনা জেলা :

আয়তন : 9660 বর্গকিমি

1983 সালে ড: অশোক মিত্র কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী 1986 সালে 1 মার্চ 24 পরগনা জেলাকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই জেলা নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমিতে নদীবাহিত পলিমাটি দ্বারা গঠিত। এই জেলায় গড়ে ওঠা নবতম দ্বীপ হল পূর্বাশা বা নিউমূর। এছাড়াও জম্বু দ্বীপ , ভাঙাদুনি দ্বীপ , লোথিয়ান দ্বীপ , বুলচেরী দ্বীপ উল্লেখযোগ্য ।

উল্লেখযোগ্য নদনদী : হুগলী, বিদ্যাধরী, রায়মঙ্গল, গোসাবা, মাতলা, সপ্তমুখী, ইছামতী প্রভৃতি। সম্ভবত আদিগঙ্গা ও গঙ্গাসাগর সঙ্গম অধ্যুষিত সমগ্র দক্ষিণ 24 পরগনা ও তার সন্নিহিত অঞ্চল গঙ্গারিডিদের রাজ্য ছিল।

উল্লেখযোগ্য বন্দর : কলপি, ডায়মন্ডহারবার ।

Speical Economic Zone (SEZ)  এই জেলার ফলতা, বানতলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। এই জেলা 5 টি মহকুমা যথা কাকদ্বীপ, ক্যানিং, বারুইপুর, আলিপুর ও ডায়মন্ডহারবার। 29 টি ব্লক / পঞ্চায়েত সমিতি ও 31 টি বিধানসভা আসন নিয়ে গঠিত এই জেলা।

অভয়ারণ্য :

i. সজনেখালি :  বন্য বরাহ, চিতল হরিণ, কুমির, বাঘ।

ii. লোথিয়ান দ্বীপ :  বন্য বরাহ , চিতল হরিণ , কুমির , বন বিড়াল , শীতের পরিযায়ী পাখি।

iii. হ্যালিডে দ্বীপ : বন্য বরাহ , মর্কট , হরিণ , বাঘ।

iv. ভাগবতপুর : কুমির প্রকল্প।

v. নরেন্দ্রন্দপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ।

1986 সালে সুন্দরবনকে বিশ্বের জীববৈচিত্র্য ক্ষেত্র (World Heritage Site) হিসাবে ঘোষণা করা হয়। 1989 সালে সুন্দরবনকে (UNESCO World Heritage Site) হিসাবে ঘোষণা করা হয় । সুন্দরবন দক্ষিণ 24 পরগনা জেলা 10 টি থানা ও উত্তর 24 পরগনা জেলার 5 টি থানা নিয়ে গঠিত।

2. উত্তর 24 পরগনা জেলা :

আয়তন : 4094 বর্গকিমি ।

1830 খ্রিস্টাব্দে ড্যাম্পিয়ার ও হজেস নামক দুইজন সার্ভে অফিসার কর্তৃক নির্ধারিত ‘ ড্যাম্পিয়ার হজেস রেখা’র দক্ষিণে অবস্থিত সক্রিয় ব-দ্বীপের নাম সুন্দরবন। দক্ষিণ – পশ্চিমের কুলপির নিকট থেকে উত্তর – পূর্বে বসিরহাট পর্যন্ত কাল্পনিক রেখার নাম ” Dampior & Hodges Line “.

এই জেলায় দক্ষিণাঞ্চল সুন্দরবন ছাড়া অরণ্যের দেখা পাওয়া যায় না। সুন্দরবন সংরক্ষিত অরণ্যের প্রায় 93.75 হেক্টর বনভূমি এই জেলার অন্তর্গত। এছাড়া 63 হেক্টর জমি বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নামে পরিচিত।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে সিরাজউদ্দৌল্লা মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা অভিযানে এসেছিলেন যে পথ ধরে তার নাম ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ( B. T. Road )। 1924 সালে এই জেলায় দমদম বিমানবন্দর তৈরি হয়।

এই জেলায় মোট 5 টি মহকুমা যথা বারাসাত সদর , বসিরহাট , ব্যারাকপুর , বনগাঁ ও বিধাননগর। 33 টি বিধানসভা আসন কেন্দ্র রয়েছে। এই জেলার হালিশহরে রামপ্রসাদের , গোপালনগরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের , নৈহাটিতে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ও কাঁচড়াপাড়ায় ঈশ্বর গুপ্তের জন্মস্থান ।

3. কলকাতা জেলা : 

1690 সালে সুতানুটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মাধ্যক্ষ জব চার্নক এই ‘ কলকাতা’র গোড়াপত্তন করেন। তিনি বরিশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীর পূর্বপুরুষ লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধুরীর কাছ থেকে তিনটি গ্রামের স্বত্ব নেন। মেকলে সাহেব এই শহরকে ‘ City of Palace ” বলেন। 2001 সালের 1 জানুয়ারি ‘ Calcutta ‘ থেকে ‘ Kolkata ‘ নাম পরিবর্তন করা হয় । ভারতের প্রথম মেট্রোরেল 1984 সালের 24 অক্টোবর কলকাতায় চালু হয়। কলকাতাকে ‘ City of Joy ‘ বলেছেন ডোমিনিক ল্যাপিয়ার।

কলকাতার কোনো মহকুমা নেই। কলকাতার পুরব্যবস্থা পুরনিগমের দ্বারা পরিচালিত হয়। কলকাতায় মোট বিধানসভার আসন সংখ্যা 11 টি ও লোকসভার আসন সংখ্যা 2 টি।

গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান : 

i. আলিপুর চিড়িয়াখানা : 1876 সালে এটি গড়ে উঠেছে ।

ii. ইডেন গার্ডেন্স :1840 সালে লর্ড অকল্যান্ডের ভগিনী মিস ইডেন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ।

iii. কালীঘাটের মন্দির : আদিগঙ্গার তীরে অবস্থিত ।

iv. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল : মহারাণী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে তাজমহলের প্রতিরূপ এই মার্বেল পাথরের ভবনটি তৈরি হয় 1921 সালে।

v. ভারতীয় জাদুঘর : 1814 সালে এশিয়াটিক সোসাইটি বেঙ্গল দ্বারা স্থাপিত হয় । এটি এশিয়ার বৃহত্তম জাদুঘর।

4. হাওড়া জেলা :

আয়তন : 1467 বর্গকিমি

1938 সালে হাওড়া জেলা স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা লাভ করে। খানাখন্দ ও জলাভূমিকে পূর্ববঙ্গে ” হাওড় ” বলা হয় । এই জেলার ভূ-ভাগ তেমন ধরনের ছিল তাই এই জেলার নামকরণ হাওড়া করা হয় ।

উল্লেখযোগ্য নদনদী : নদীগুলির মধ্যে হুগলী – ভাগীরথী প্রধান। এছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নদীগুলি হল রূপনারায়ণ, দামোদর, সরস্বতী।

Botaniocal Garden- হাওড়ার শিবপুরে অবস্থিত । আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু নামকরণ করেন এই Botanical Garden– এর ।

হাওড়া শহর তথা জেলায় ইঞ্জিনীয়ারিং ও ফাউন্ড্রি শিল্পের আধিক্য থাকায় এই জেলাকে ভারতের গ্লাসগো বা বার্মিংহাম বা শেফিল্ড বলা হয়। জাহাজ তৈরি ও মেরামতির কেন্দ্র হিসাবে সালকিয়া , শালিমার ওয়ার্কস বিখ্যাত। বস্ত্রশিল্পের এক বৃহৎ হাট হাওড়ায় বসে যা হাওড়া হাট বা মঙ্গলা হাট নামে পরিচিত।

1854 সালে হাওড়া রেল স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয় । বর্তমানে হাওড়া হল পূর্ব রেলওয়ে ও দক্ষিণ – পূর্ব রেলওয়ের প্রধান কেন্দ্র।

হাওড়া সেতু : কলকাতার সঙ্গে হাওড়ার সংযোগের জন্য 1875 সালে প্রথম একটি ভাসমান সেতুর নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীকালে এই সেতুর উত্তর পাশ এই ক্যান্টিলিভার সেতুর নির্মাণ করে 1943 সালে। ব্যবহার করা শুরু হয়। বর্তমানে এই সেতু রবীন্দ্র সেতু নামে পরিচিত।

বিবেকানন্দ সেতু : 1929 সালে হাওড়ার বালি ও দক্ষিণেশ্বর – এর সংযোগস্থলে উইলিঙ্গডন ব্রিজ তৈরি হয়। পরবর্তীকালে এই ব্রিজ বিবেকানন্দ সেতু নামে পরিচিত হয়। এই সেতুর পাশে যে নতুন সেতুটি নির্মিত হয়েছে তা দ্বিতীয় বিবেকানন্দ সেতু বা ভগিনী নিবেদিতা সেতু নামে পরিচিত।

বিদ্যাসাগর সেতু : কলকাতা ও হাওড়াকে যুক্ত করেছে এই সেতু । এটি এশিয়ার সবচেয়ে লম্বা কেবল ব্রিজ। 1992 সালে এই ব্রিজ ব্যবহার করা শুরু হয়।

এই জেলার 2 টি মহকুমা যথা হাওড়া সদর ও উলুবেড়িয়া , 16 টি বিধানসভা আসন নিয়ে গঠিত। এছাড়াও গাদিয়াড়া পর্যটন আবাস বিখ্যাত। মাকড়চণ্ডী মন্দির , দেবী চণ্ডির প্রাচুর্য্য দেখা যায়। পানিত্রাসে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বসতবাটি।

5. হুগলি জেলা :

অতীতে এই জেলা বর্ধমান জেলার অন্তর্গত ছিল। 1795 – এ বর্ধমান জেলার দক্ষিণাংশ হুগলি নামে স্বীকৃতি পায়। একসময় ভাগীরথীর তীরে হোগলা বন ছিল। সম্ভবত হোগলা থেকে হুগলি নামের উৎপত্তি। 1816 সালে চুঁচুড়া ইংরেজদের দখলে আসে। 1950 সালে চন্দননগর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

এই জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ভাগীরথীর সঙ্গে সরস্বতী নদীর একটি খাল দ্বারা সংযোগ ছিল। বর্তমানে এটি কাটিগঙ্গা নামে পরিচিত। এছাড়া দামোদরের পুরনো যে ধারাটি রয়েছে সেটি কানা কোনার খাল নামে পরিচিত। এছাড়া দ্বারকেশ্বর নদী এই জেলার বন্দর নামক স্থানে শিলাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে রূপনারায়ণ নামে প্রবাহিত হয়েছে। পশ্চিমবদের বৃহত্তম বিল-টি এই হুগলি জেলায় অবস্থিত। এটি ডানকুনি বিল নামে পরিচিত।

আলুচাষের জন্য এই জেলা বিখ্যাত। এছাড়া এই জেলার রিষড়ায় 1853 সালে ভারতের প্রথম চটকল গড়ে ওঠে । এই জেলায় মহকুমার সংখ্যা 4 টি যথা- চুঁচুড়া সদর , চন্দননগর , শ্রীরামপুর , আরামবাগ ও বিধানসভার আসনসংখ্যা 18 টি ।

রামকৃষ্ণদেবের বসতবাড়ী কামারপুকুর , তারকেশ্বরের শিব মন্দির , শরৎচন্দ্রের জন্মভিটা দেবানন্দপুর , বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির , হুগলী ইমামবাড়া বিখ্যাত।

এই জেলায় ভাগবতপাঠ ও দরিদ্রনারায়ণ সেবার প্রচলন আছে । এছাড়া মনসা পুজো , ঝুলনযাত্রা , ইপুজো , ওলাইচণ্ডী পুজো , চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো ও বাঁশবেড়িয়ার কার্তিক পূজো বিখ্যাত । বলাগড়ের কাঁচাগোল্লা , কামারপুকুরের বোঁদে ও সাদা জিলিপি , চন্দনগরের জলভরা তালশাঁস সন্দেশ , খানাকুলের কালাকাঁদ , সিঙ্গুরের দই বিখ্যাত।

6. নদীয়া জেলা :

আয়তন : 3927 বর্গকিমি

1947 সালে সাময়িকভাবে জেলাটির নাম দেওয়া হয় নবদ্বীপ। কর্কটক্রান্তি রেখা এই জেলাকে প্রায় দু’ভাগে বিভক্ত করেছে ।

উল্লেখযোগ্য নদনদী : এই জেলায় ভাগীরথী , জলঙ্গী , ভৈরব , চূর্ণী , মাথাভাঙ্গা , ইছামতী ইত্যাদি নদী প্রবাহিত হয়েছে। এই জেলায় বনভূমির পরিমান খুব কম মাত্র 1.22 হেক্টর । এই জেলার ‘ বেথুয়াডহরি ‘ একমাত্র অভয়ারণ্য।

শিল্প : কল্যাণীর স্পিনিং মিল , চাকদার পেপার মিল , হরিণঘাটার ডেয়ারি উল্লেখযোগ্য শিল্প এবং কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল উল্লেখযোগ্য।

এই জেলা 4 টি মহকুমা যথা- কৃষ্ণনগর , তেহট্ট , রাণাঘাট , কল্যাণী , 17 টি বিধানসভার আসন আসন নিয়ে গঠিত। নবদ্বীপকে বাংলার অক্সফোর্ড বলা হয় । কৃষ্ণনগর জগদ্বাত্রী পূজোর জন্য বিখ্যাত । এছাড়া নদীয়া জেলার মুসলমানদের ‘ জারি ‘ গান ও হিন্দু সন্ন্যাসীর ‘ বোলান ‘ গান বিখ্যাত।

এই জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল নবদ্বীপ ( মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান ) , মায়াপুর ( ইসকনের মন্দির ) , ফুলিয়া ( কবি কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান ) ও পলাশী।

7. পূর্ব মেদিনীপুর জেলা :

আয়তন : 4736 বর্গকিমি

2002 সালের 1 জানুয়ারি মেদিনীপুর জেলাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গঠিত হয়। ওশিয়ার রাজা প্রাণকরের পুত্র মেদিনীকরের নাম থেকে এই জেলার নাম মেদিনীপুর হয় বলে মনে করা হয়।

এই জেলায় পান , তরমুজ , কাজুবাদাম ইত্যাদি চাষাবাদ করা হয়। এই রাজো 4 টি মহকুমা যথা- হলদিয়া , তমলুক , কাঁথি , এগরা রয়েছে । এই জেলায় । বিধানসভার আসন সংখ্যা 16 টি।

1968 সালে ইন্ডিয়ান ওয়েলের পরিচালনায় তৈল শোধনাগার স্থাপন হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে করা হয় । 1975 সালে তৈল শোধনাগারে উৎপাদন শুরু হয় । কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ার স্টেশন ও বিভিন্ন অপ্রচলিত শক্তি যথা- সৌর বিদ্যুৎ , সমুদ্র তরঙ্গ ও জোয়ার – ভাটা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ।

দর্শনীয় স্থান : কাথি , দীঘা , রামনগর , জুনপুট , শঙ্করপুর ইত্যাদি এই জেলার দর্শনীয় স্থান । এছাড়াও তমলুকের বর্গভীমা মন্দির বিখ্যাত।

8. পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা :

আয়তন : 6308 বর্গকিমি।

এই জেলায় 3 টি মহকুমা যেগুলি হল- মেদিনীপুর সদর , খড়গপুর , ঘাটাল নিয়ে গঠিত। এই জেলার মোট বিধানসভা কেন্দ্র 15 টি ও লোকসভা কেন্দ্র 2 টি।

এই জেলার পশ্চিমাংশ ছোটনাগপুর মালভূমির সম্প্রসারণ । এই জেলায় অরণ্যের দ্রুত ধ্বংসের বিরুদ্ধে 1960 সালে বনবিভাগ পদক্ষেপ নেয় । 1970-72 সালে আরাবারি এবং 1980 – তে গ্রামের লোকদের সঙ্গে মিতালি করে Joint Forest Management যে বন সংরক্ষণ শুরু করে তার সাফল্যের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত ‘ গেটি ‘ পুরস্কার লাভ করে।

এই জেলা মাদুর তৈরির জন্য বিখ্যাত। সবং ও পিংলায় মাদুর তৈরি হয় । হিজলী বন্দীশিবির খড়গপুরে অবস্থিত।

9. ঝাড়গ্রাম জেলা :

আয়তন : 3037 বর্গকিমি

2017 সালের 4 ঠা এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভেঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলার সৃষ্টি হয়। এই জেলায় 1 টি মহকুমা ঝাড়গ্রাম নিয়ে গঠিত । এই জেলার মোট বিধানসভা কেন্দ্ৰ 4 টি।

10. বাঁকুড়া জেলা :

আয়তন : 6882 বর্গকিমি

1833 সাল পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলা ‘ জঙ্গল মহল ‘ নামে পরিচিত ছিল । 1876 সালে নাম পরিবর্তন করে হয় পশ্চিম বর্ধমান এবং শেষ পর্যন্ত 1881 সালে অঞ্চলটি বাঁকুড়া নামে পরিচিত।

গুরুত্বপূর্ণ পাহাড় : বিহারীনাথ , শুশুনিয়া , কোড়ো ও মশক পাহাড় অবস্থিত।

এই জেলায় 3 টি মহকুমা হল বাঁকুড়া সদর , খাতরা , বিষ্ণুপুর । বিধানসভার আসনসংখ্যা 12 টি।

আঞ্চলিক নৃত্য : ভাদু , টুসু , ঝুমুর , রাবণকাটা নাচ , ছৌ , হাই ইত্যাদি। এছাড়া বালুচরী শাড়ি বিখ্যাত যা মূলত বিষ্ণুপুরে উৎপাদিত হয়।

দর্শনীয় স্থান : বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার মন্দির , বিহারীনাথ পাহাড় , ঝিলিমিলি অরণ্য , মুকুটমণিপুর জলাধার , রামকিংকরের ভাস্কর্য ইত্যাদি।

11. পুরুলিয়া জেলা :

আয়তন : 6259 বর্গকিমি

পুরুলিয়ার স্থানীয় নাম ‘ পুরুলো ‘ । 1971 সালে Purulia বনান পরিবর্তন করে Puruliya করা হয় । পুরুলিয়ার পূর্বনাম ছিল মানভূম । 1956 সালে 1 লা নভেম্বর রাজ্য পুনর্গঠনের সময় পুরুলিয়া জেলা গঠিত হয়। এই জেলার 3 টি মহকুমা রয়েছে পুরুলিয়া সদর , ঝালদা ও রঘুনাথপুর। এই জেলায় বিধানসভার আসন সংখ্যা ৪ টি ও লোকসভার আসন সংখ্যা 1 টি ।

উল্লেখযোগ্য পাহাড় : বাঘমুণ্ডি , পাঞ্চেত , জয়চণ্ডী , গুরুমা পাহাড় অবস্থিত ।

প্রধান নদী : কংসাবতী বা কাসাই , দ্বারকেশ্বর বা ধলকিশোর ও শিলাবতী বা শিলাই । এই নদীগুলিতে বর্ষাকালে Flash Flood দেখা যায় । এই জেলায় শাল গাছের প্রাধান্য দেখা যায় । এই জেলায় আদ্রা রেল জংশন অবস্থিত।

কয়লা উত্তোলন ছাড়া বড় কোনো শিল্প এই জেলায় নেই। এই রাজ্যে লাক্ষাশিল্প ও বিড়ি শিল্পের প্রাধান্য রয়েছে ।

দর্শনীয় স্থান : সাহেব বাঁধ , কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজবাড়ি , চড়িদাগ্রামে ছৌনৃত্যের মুখোশ তৈরি , বুধেশ্বরে শিবের মন্দির ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান।

12. পূর্ব বর্ধমান জেলা :

আয়তন : 7024 বর্গকিমি

বর্ধমান শব্দটি বরাহমিহিরের বৃহৎ সংহিতার ভর্ধমান ’ শব্দটি থেকে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হয় । বর্তমানে এই জেলা 2017 সালের 7 এপ্রিল দুটি জেলায় ভাগ করা হয়েছে  পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান । কার্জন গেট , 108 শিব মন্দির এই জেলায় অবস্থিত।

নদনদী : ভাগীরথী , দামোদর , তাজয় ও দ্বারকেশ্বর ।

পূর্ব বর্ধমান জেলায় 4 টি মহকুমা রয়েছে যথা বর্ধমান উত্তর , বর্ধমান দক্ষিণ , কালনা , কাটোয়া। বিধানসভার আসন সংখ্যা 17 টি । পূর্ব বর্ধমান জেলাকে পশ্চিমবঙ্গের ‘ ধান ভাণ্ডার ’ বলা হয়।

13. পশ্চিম বর্ধমান জেলা :

এই জেলায় দুটি মহকুমা – আসানসোল ও দুর্গাপুর। বিধানসভার আসন সংখ্যা ৪ টি ও লোকসভার আসন সংখ্যা 1 টি । এই জেলার রাণীগঞ্জেই 1774 সালে ভারতের প্রথম কয়লাখনি অবস্থিত হয় । এছাড়া চিত্তরঞ্জনে ভারতের বৃহত্তম রেলইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা অবস্থিত।

উল্লেখযোগ্য নদী : দামোদর , অজয় ও দ্বারকেশ্বর।

দর্শনীয় স্থান : মেঘনাদ সাহা তারামণ্ডল , মাইথন বাঁধ , কবিতীর্থ চুরুলিয়া নজরুলের জন্মস্থান , কল্যাণেশ্বরী মন্দির , নাচন পাখীরালয়।

14. বীরভূম জেলা :

আয়তন : 4545 বর্গকিমি

বীরভূম জেলা স্বীকৃতি পায় 1820 সালে। এই জেলায় ৩ টি মহকুমা সিউড়ি সদর , বোলপুর , রামপুরহাট নিয়ে গঠিত । এই জেলায় বিধানসভার আসনসংখ্যা 11 টি। বীরভূম জেলার বীর শব্দটি বীর পদবিযুক্ত প্রাচীন হিন্দুবংশ থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়।

এই জেলার বক্রেশ্বর নদীর ডানতীরে এক ঝাঁক সালফিউরাস উষ্ণ প্রস্রবণ (Sulphurous Spring) আছে । এই জেলার খয়রাশোল ও মহম্মদবাজার এলাকায় আর্টেজীয় কূপ আছে।

বোলান ও পাঁচালি , মঙ্গলচণ্ডী , মুঠ সংক্রান্তি , পটের গান , নবান্ন , জয়দেবের মেলা , পৌষমেলা , চণ্ডীদাসের মিলনমেলা এই জেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য । এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল শান্তিনিকেতন , বক্রেশ্বর , ফুল্লরা মন্দির , তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মভিটে ইত্যাদি।

15. মুর্শিদাবাদ জেলা :

আয়তন : 5324 বর্গকিমি

সপ্তম শতাব্দীতে গৌড়রাজ্য শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ যা বর্তমানে মুর্শিদাবাদ নামে পরিচিত । জেলা হিসাবে মুর্শিদাবাদ 1786 সালে আত্মপ্রকাশ করে । প্রাথমিকভাবে র‍্যাডক্লিফ মুর্শিদাবাদকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করেন , যদিও শেষ পর্যন্ত এই জেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয ।

ভাগীরথী নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে এই জেলাকে পূর্ব – পশ্চিম দুভাগে ভাগে ভাগ করেছে । পূর্বভাগ ‘ বাগড়ি ‘ ও পশ্চিম ভাগ ‘ রাঢ় ‘ নামে পরিচিত । এই জেলার প্রধান নদী গঙ্গা । এই জেলার দক্ষিণ – পূর্বের নিম্নভূমি কালান্তর নামে পরিচিত ।

মুর্শিদাবাদ ফলচাষে উল্লেখযোগ্য বিশেষত আম । এছাড়া এই জেলা রেশমচাষে অগ্রগণ্য । উৎপাদিত সিল্ক ও সুতি দ্রব্যের মধ্যে সিল্ক , কোরা থান , জামদানি , বালুচরী , কোরিয়ান বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।

এই জেলাতে মহকুমার সংখ্যা 5 টি ( বহরমপুর সদর , কান্দি , জঙ্গিপুর , লালবাগ , ডোমকল ) । বিধানসভা আসন 22 টি ।

দর্শনীয় স্থান : হাজারদুয়ারি , হুমায়ুনের বানানো সুউচ্চ মিনার , মদিনা মসজিদ , বিশাল বাচ্চাওয়ালি তোপ , ইমামবাড়া , ওয়াসেফ মঞ্জিল , জাহানকোষা কামান , কাটরা মসজিদ , মুর্শিদকুলি খাঁর অস্ত্রভাণ্ডার ও সমাধি ইত্যাদি । এছাড়াও হীরাঝিল উদ্যান , যুগেশ্বরের শিবমন্দির বিখ্যাত।

16. মালদা জেলা :

আয়তন : 3733 বর্গকিমি

‘মলদ ’ নামে এক গোষ্ঠী এই অঞ্চলে বাস করত। তা থেকেই ‘ মালদা ’ নামের উৎপত্তি । আবার অনেকে মনে করেন ফারসি শব্দ ‘ মাল ‘ ( অর্থ ‘ সম্পদ ’ ) ও বাংলা ‘ দহ ‘ ( অর্থ ‘ সাগর ‘ ) থেকে মালদহ শব্দের জন্ম। 1876 সালে ভাগলপুর বিভাগের অংশরূপে মালদার জন্ম । 1947 সালে মালদা ভারতের অংশ হয় ।

মহানন্দা নদী এই জেলাকে পূর্ব – পশ্চিমে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে বারিন্দ ও তাল । আবার পশ্চিমপাড়ের অংশকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় যথা- কালিন্দী নদীর উত্তরভাগ তাল ও দক্ষিণভাগ দিয়ারা।

বারিন্দ অঞ্চলে হিজলগাছ দেখা যায় । এই অংশের অরণ্য স্থানীয়ভাবে কোতাল নামে পরিচিত । এই জেলায় আম ও তুঁতগাছ চাষ করা হয় । রেশমচাষের জন্য অগ্রগণ্য । আম এই জেলার প্রধান ফসল । ফজলি আমের উৎপাদন সর্বাধিক।

এই জেলায় মহকুমা 2 টি (মালদা সদর ও চাঁচল) , বিধানসভার সংখ্যা 12 টি।

এই জেলার রামকেলি মেলা , বাইচের মেলায় নৌকা প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্য । এছাড়া গৌড় শহরের নসরত শাহ নির্মিত বড়ো সোনা মসজিদ , সাইফুদ্দিন ফিরোজ নির্মিত 84 ফুটের ফিরোজ মিনার , চিকন মসজিদ এবং পাণ্ডুয়ার আদিনা মসজিদ , কুতুবশাহী , মসজিদ , জাম – ই – মসজিদ উল্লেখযোগ্য । এই জেলার জগজ্জীবনপুরে বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে । তুলাভিটা , নিমডাঙা হল প্রত্নতত্ত্বস্থল । এছাড়া পাল – সেন যুগের মূর্তি , পাণ্ডুলিপি এই জেলায় পাওয়া যায়।

17. দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা :

আয়তন : 2219 বর্গকিমি

1992 সালে পশ্চিম দিনাজপুর জেলাকে ভেঙে দক্ষিণ দিনাজপুর ও উত্তর দিনাজপুর জেলা তৈরি হয়।

নদী : পুণর্ভবা , তপন ও আত্রেয়ী ।

এই জেলা 2 টি মহকুমা (বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুর) , 6 টি বিধানসভা আসন।

দর্শনীয় স্থান : বানগড় (বৌদ্ধমঠের আকৃতি বিশিষ্ট স্থাপত্যকলা) ও কালো দিঘী , ধলোদিঘী।

18. উত্তর দিনাজপুর জেলা :

আয়তন : 3140 বর্গকিমি

সুলতানী যুগে হিন্দুরাজা গণেশ ‘ দুনুজমর্দনদেব ‘ উপাধি নিয়ে গৌড়েশ্বরে বসেন । অনেকের মতে এই দুমুজ উচ্চরাণে দিনজ বা দনোজ হয়ে যায় কালক্রমে তা দিনাজপুরে পরিণত হয় । এই জেলায় বরেন্দ্রভূমি দেখা যায় ।

এই জেলায় মহকুমা 2 টি (ইসলামপুর ও রায়গঞ্জ) ও বিধানসভা আসন 9 টি ।

এই জেলার প্রধান নদী মহানন্দা । রাজবংশী সমাজের ক্ষণগান , নটুয়া গান ও বোলাভাই গান প্রচলিত আছে । রায়গঞ্জের কাছে কুলিক নদীর তীরে কুলিক পাখিরালয় (অভয়ারণ্য) গড়ে উঠেছে । এখানকার (ইসলামপুর) আনারস বিখ্যাত।

19. দার্জিলিং জেলা :

আয়তন : 2092 বর্গকিমি

দার্জিলিং নামের উৎপত্তি তিব্বতি শব্দ ‘ দোর্জে লিং ‘ থেকে যার অর্থ বজ্রের দেশ।

দার্জিলিং জেলার মূল নদী হল তিস্তা । এই জেলায় বিভিন্ন ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায় যথা-

i. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ : (1000 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত)। যেমন- শাল , সেগুন , শিশু , গর্জন ।

ii. উপক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ– (1000-1500 মিটার উচ্চতা) যেমন- টারমিনালিয়া , মিচেলিয়া , সেডরেলা ।

iii. সরলবর্গীয় উদ্ভিদ – (1500-3200 মিটার উচ্চতা)। যেমন-ওক , ম্যাগনোলিয়া , রডডেনড্রন , বার্চ , ফার । মিটার উচ্চতার বেশি।

iv. আল্পীয় তৃণভূমি : 3200 যেমন- আপ্পীয় ঘাস , সিলভার ফার । এই জেলায় পড়সল মৃত্তিকা দেখা যায় ।

এখানে কমলালেবু , বড় এলাচ , আনারস , লিচু ইত্যাদি চাষ হয় । চা শিল্প এই জেলার অন্যতম । দার্জিলিং – এ বিভিন্ন নেপালী , তিব্বতী , রাজবংশী , মুণ্ডা , মাড়োয়ারি , পাঞ্জাবী মানুষের সমাগম হয়েছে । তাই এই জেলাকে Babel of Tribes & Nations বলে । এই জেলায় ন্যারোগেজ , মিটারগেজ ও ব্রডগেজ তিন ধরনের রেলপথ আছে। এই জেলার ট্রয়ট্রেন World Heritage- র সম্মান পেয়েছে । এখানকার ‘ ঘুম ’ রেলওয়ে স্টেশন পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেল স্টেশন

সিঞ্চল হ্রদ থেকে এখানে জল সরবরাহ করা হয় । তিস্তা ব্রীজ – স্থানীয় ভাষায় বাঘপুল । এলাচি , কমলা , আদা ভালো চাষ হয় । কার্সিয়াংকে Land of White Acid বলে । লেপচাদের মাতৃভাষা রং – রিংকার্সিয়াং কথার অর্থ বেতের লাঠি

জেলার দর্শনীয় স্থানগুলি হল Himalayan Mountaineering Institute , Step Aside , লেবং রেস ট্র্যাক , টাইগার হিল উল্লেখযোগ্য । এই জেলার 4 টি মহকুমা (দার্জিলিং সদর , কার্সিয়াং , মিরিক ও শিলিগুড়ি) । এই জেলায় বিধানসভার আসন সংখ্যা 9 টি।

20. কালিম্পং জেলা :

আয়তন : 1044 বর্গকিমি

2017 সালের 14 ই ফেব্রুয়ারি দার্জিলিং জেলার কালিম্পং মহকুমা পৃথক হয়ে একটি নতুন জেলা – কালিম্পং সৃষ্টি হয়। মহকুমা 1 টি – কালিম্পং । বিধানসভা 1 টি ।

21.জলপাইগুড়ি জেলা :

আয়তন : 2844 বর্গকিমি

স্থানীয় ভাষায় এই স্থানকে ‘ গুড়ি ’ বলা হয় । জলপাইগুড়ি নামের উৎপত্তি সম্ভবত ‘ জলপাই ’ ফল থেকে । জলপাইগুড়ি জেলা 1869 সালে রংপুর থেকে আলাদা হয় । এই জেলা 2 টি মহকুমা (জলপাইগুড়ি সদর ও মালবাজার) নিয়ে গঠিত । এই জেলা ডুয়ার্স (Door of Bhutan) অঞ্চলে অবস্থিত । জলপাইগুড়ি জেলা বিভক্ত হবার পর

মোট জনসংখ্যা 23.81 লক্ষ । লিঙ্গানুপাত 956। সাক্ষরতার হার 64.48 শতাংশ। পুরুষ সাক্ষরতা 70.39 শতাংশ , মহিলা সাক্ষরতা 58.30 শতাংশ।

এই জেলায় পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় । জলপাইগুড়ি জেলার প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ হল চা । জয়ন্তী ও বক্সা পাহাড় এই জেলায় অবস্থিত । ডলোমাইট , চুনাপাথর ও কোয়ার্টজাইট হল এই জেলার উল্লেখযোগ্য খনিজদ্রব্য । বিধানসভা – ৪ টি ।

বক্সা টাইগার রিজার্ভ , চাপড়মারি , লাটাগুড়ি , জলদাপাড়া , গরুমারা অভয়রাণ্য অবস্থিত । জর্দা নদীর তীরে জল্পেশ্বরের শিব মন্দির , তিস্তাবুড়ির পূজা , মনসা পূজা এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হুট ঘূর্ণির পূজা বিখ্যাত । কীচক উপজাতি তরাই অঞ্চলে বাস করে । এখানকার প্রধান নদী তিস্তা (পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী) । তিস্তার তীরে জলপাইগুড়ি অবস্থিত। এছাড়াও তোর্সা , জলঢাকা , রায়ডাক , দিনা , সংকোশ উল্লেখযোগ্য । এই জেলায় আনারন , কলা ভাল হয়।

22. আলিপুরদুয়ার জেলা :

আয়তন : 3383 বর্গকিমি

2014 সালের 25 জুন জলপাইগুড়ি জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমা পৃথক হয়ে একটি নতুন জেলা আলিপুরদুয়ার সৃষ্টি হয়। মহকুমা 1 টি- আলিপুরদুয়ার । বিধানসভা 5 টি । এই জেলার মোট জনসংখ্যা 14.91 লক্ষ । লিঙ্গানুপাত 948 সাক্ষরতার হার 64.57 যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার 70.48 , মহিলা সাক্ষরতার হার 58.38।

1865 সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ – ভূটানের যুদ্ধে সিংচুলা চুক্তি অনুযায়ী আলিপুরদুয়ার বাংলার সাথে যুক্ত হয় ।

উল্লেখযোগ্য নদী : তোর্সা , হলং , মুজনাই , রায়ডাক , কালজানি , সংকোশ।

প্রধান শিল্প : চা শিল্প ও পর্যটন।

খনিজ : ডলোমাইট প্রধান খনিজ।

দর্শনীয় স্থান : জলদাপাড়া অভয়ারণ্য , বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প , চিলপাতা ফরেস্ট , বক্সা ফোর্ট উল্লেখযোগ পর্যটন কেন্দ্র । ঘন চিরসবুজ অরণ্য , চা বাগান ও ডুয়ার্স এখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য । লুপ্তপ্রায় টোটো উপজাতি মাদারী হাটে রয়েছে।

23. কোচবিহার জেলা :

আয়তন : 3387 বর্গকিমি

কোচ জাতির বাসভূমি তাই এই রাজ্যের এরূপ নামকরণ। এই জেলা 1951 সালে ভারতের সাথে যুক্ত হয় । কোচবিহার শহর তোর্সা নদীর তীরে অবস্থিত। এই জেলার সীমানায় 110 টি ছিটমহল রয়েছে । এই জেলায় মোট 5 টি মহকুমা যথা কোচবিহার সদর , দিনহাটা , মাথাভাঙা , তুফানগঞ্জ , মেখলিগঞ্জ নিয়ে গঠিত । বিধানসভার সংখ্যা 9 টি ।

নদী : তিস্তা , তোর্সা , জলঢাকা , রায়ডাক অন্যতম নদী । তুফানগঞ্জে রসিকবিল অবস্থিত।

দর্শনীয় স্থান : কালজানি , মদনমোহন মন্দির , বানেশ্বর শিবমন্দির , কোচবিহার রাজবাড়ি , ঘূর্ণেশ্বরী মন্দির উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।

আরও পড়ুন : 

West Bengal Geography GK

 

2 thoughts on “পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলার নাম ও তাদের বর্ণনা | Names of 23 districts of West Bengal and their description”

Leave a Comment