সভাসমিতির যুগ বলতে কি বোঝ | সভাসমিতি যুগের বৈশিষ্ট্য

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

সভাসমিতির যুগ বলতে কি বোঝ | সভাসমিতি যুগের বৈশিষ্ট্য

সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম সভাসমিতির যুগ বলতে কি বোঝ এবং সভাসমিতি যুগের বৈশিষ্ট্য ? চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তৃত আলোচনাটি।

◆ সভাসমিতির যুগ :

অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে উনিশ শতকের প্রথময়ার্ধে একের পর এক আদিবাসী ও কৃষক আন্দোলন এবং মহাবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এর পাশাপাশি উনিশ শতকে ভারতে বিভিন্ন সভাসমিতিও  প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।

1. রাজনৈতিক আন্দোলনের তাগিদ : মহাবিদ্রোহের পর দ্রুত ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটতে থাকে। এই সময় ভারতীয়রা উপলব্ধি করতে শুরু করে যে, অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।

2. সভাসমিতির প্রতিষ্ঠা : উনিশ শতকের চতুর্থ দশক থেকে এদেশে নানা সভাসমিতি গড়ে উঠতে থাকে। প্রথমে বাংলায় এবং পরে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুরূপ সভাসমিতি গড়ে উঠতে থাকে।

3. নামকরণ : উনিশ শতকে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের উদ্যোগে একের পর এক সভাসমিতি গড়ে ওঠার জন্য কেম্ব্রিজ গোষ্ঠীর ঐতিহাসিক ড. অনিল শীল এই যুগকে ‘ সভাসমিতির যুগ ’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

4. বিভিন্ন সভাসমিতি : উনিশ শতকে ভারতে বিভিন্ন সভাসমিতি গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

i. বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা
ii. জমিদার সভা
iii. ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন
iv. হিন্দুমেলা
v. ভারতসভা
vi. জাতীয় কংগ্রেস প্রভৃতি

পড়ুন : ভারত সভা

◆ সভাসমিতি যুগের বৈশিষ্ট্য :

ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকে ভারতে একে একে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এজন্য ড. অনিল শীল এই যুগকে ‘ সভাসমিতির যুগ ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। সভাসমিতির যুগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন-

1. বাংলায় সূত্রপাত : ব্রিটিশ শাসনকালে সর্বপ্রথম বাংলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। পরে ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও অনুরূপ সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে।

2. উদ্দেশ্য : ভারতীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এইসব সভাসমিতির মূল উদ্দেশ ছিল ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষা করা। এই উদ্দেশ্যে সভাসমিতিগুলি ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করত।

3. উচ্চবিত্তদের প্রাধান্য : সাধারণত সমাজের শিক্ষিত উচ্চবিত্তরাই এইসব সংগঠনের সদস্য হতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন।

4. সীমিত প্রভাব : এই সময়ের রাজনৈতিক সভাসমিতিগুলির প্রভাব ছিল খুবই সীমিত। দেশের সাধারণ দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে এবং গ্রামাঞ্চলে এর বিশেষ প্রভাব পড়েনি।

5. ধীরগতির কার্যকলাপ : প্রথমদিকের সংগঠনগুলির রাজনৈতিক কার্যকলাপের গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। প্রকৃতপক্ষে ‘ ভারতসভা ’ (1876 খ্রি.) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনগুলির রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

মূল‍্যায়ন : উনিশ শতকে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সভাসমিতি ভারতবাসীর রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তবে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত এই সমিতিগুলি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিজেদের কর্মকাণ্ডে শামিল করতে পারেনি।

আরও পড়ুন : 

ভারত সভার উদ্দেশ্যে ও কার্যাবলী 

জমিদার সভা সম্পর্কে আলোচনা করো

1 thought on “সভাসমিতির যুগ বলতে কি বোঝ | সভাসমিতি যুগের বৈশিষ্ট্য”

Leave a Comment