রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল ?

টেলিগ্ৰামে জয়েন করুন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল ?

সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে শেয়ার করলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তৃত আলোচনাটি।

শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য :

ভূমিকা : শান্তিনিকেতন ছিল বর্তমান বীরভূম জেলার বোলপুরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি গ্রাম। আগে এই স্থানের নাম ছিল ভুবনডাঙ্গা। এই স্থান কলকাতার ঠাকুরবাড়ির বিখ্যাত মানুষের পদার্পণে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে।

1. আশ্রমের নামকরণ : রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিভৃতে ধর্মচর্চা করার উদ্দেশ্যে ভুবনডাঙ্গায় 1861 খ্রিস্টাব্দে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই স্থানের নতুন নামকরণ করেন ‘ শান্তিনিকেতন ‘।

2. ব্রহ্ণবিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 1901 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ব্রত্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি সুবিস্তৃত প্রাকৃতিক পরিবেশে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজের ও অন্যান্য আশ্রমিকদের বসবাসের জন্য সুন্দর সুন্দর ভবন নির্মাণ করেন।

3. বিশ্বভারতীর পরিকল্পনা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি আদর্শ শিক্ষাদান ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে 1919 খ্রিস্টাব্দ থেকে শান্তিনিকেতনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে শুরু করেন যার নাম হয় ‘ বিশ্বভারতী ’।

4. বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : অবশেষে তিনি বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের সন্নিকটে শান্তিনিকেতনে 1921 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য :

ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 1901 সালে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পল্লিসংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি 1912 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সুরুল গ্রামে একটি কুঠিবাড়ি কিনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে পল্লি সংগঠনের কাজ শুরু করেন। শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য গুলি হল-

1. পল্লি সংগঠন : গ্রামীণ মানুষকে পল্লিজীবনের নানাদিক সম্পর্কে সচেতন করে তোলাই ছিল কবির উদ্দেশ্য। ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন লেনার্ড এলমহার্স্ট। 1924 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে যে ‘ শিক্ষাসত্র’টি প্রতিষ্ঠিত হয় , সেটিই 1927 খ্রিস্টাব্দে শ্রীনিকেতনে স্থাপিত হয়। এখানে ‘ শিক্ষাসত্র ’ বিদ্যালয়টিকে শান্তিনিকেতনের ‘ পাঠভবন ’ – এর আদলে স্থাপন করা হয়েছিল।

2. কৃষির উন্নয়ন : গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল কৃষিকাজ। তাই রবীন্দ্রনাথ শ্রীনিকেতনের বিভিন্ন কর্মপদ্ধতির মধ্য দিয়ে কৃষির উন্নতির উদ্যোগ নেন। 1963 খ্রিস্টাব্দে ‘ পল্লিশিক্ষাসদন ’ নামে এখানে একটি কৃষি মহাবিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। সঙ্গে গ্রামীণ শিল্পোৎপাদন ও গো – পালন চলতে থাকে।

3. স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার : শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শ্রীনিকেতনকে মডেল হিসেবে বেছে নেওয়া হয় । এই উদ্দেশ্যে এখানে 1941 খ্রিস্টাব্দে ‘ শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

4. শিক্ষার প্রসার : শিক্ষার প্রসার ঘটানো ছিল শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য । শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগকে সকল স্তরের জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল । এই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে 1936 খ্রিস্টাব্দে ‘ লোক – শিক্ষা সংসদ ’ স্থাপন করা হয়।

মূল‍্যায়ন : শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন উভয়ই ছিল গ্রাম। রবীন্দ্রনাথের সাধের দুই গ্রামেই তাঁর স্বপ্ন ডানা মেলতে পেরেছিল। বর্তমানে এই দুটি স্থান রবীন্দ্র ঐতিহ্যের পীঠস্থান হিসেবে পরিগণিত হয়।

আরও পড়ুন :

সভাসমিতির যুগ বলতে কি বোঝো এবং বৈশিষ্ট্য

2 thoughts on “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল ?”

Leave a Comment